Wednesday, 3 October 2012

Still Smell Burnt


বুধবার, ০৩ অক্টোবর ২০১২
রামুতে এখনও পোড়া গন্ধ

প্রিয়তোষ পাল পিন্টু  ও নীতিশ বড়ুয়া : রামুতে এখনো পোড়া গন্ধ ভস্মীভূত বাড়ি ঘর ও বৌদ্ধ মন্দিরে ধ্বংসস্ত্তপ। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলেছে জনগণের চলাচল বাড়ছে যানবাহন যাতায়াত করছে কিন্তু মানুষের চোখে-মুখে বিমর্ষতা। আস্থার অভাব সেখানে প্রকট আকার ধারণ করেছে। দীর্ঘ বছরের সম্প্রীতিতে আঘাত সংখ্যাগুরম্ন জনসাধারণকেও অপরাধ বোধে তাড়িত করছে।
 হাজার বছরের বৌদ্ধ পুরাকীর্তি ও মন্দির হারিয়ে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা বাকরম্নদ্ধ হয়ে পড়েছে। বড়ুয়া সম্প্রদায়ের এক যুবকের ফেসবুক থেকে পবিত্র কুরআন অবমাননাকর চিত্র প্রকাশের অভিযোগে ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে রামু উপজেলাব্যাপী ব্যাপক তান্ডব হয়ে যায়। ক্ষুব্ধ জনসাধারণ প্রতিবাদ সমাবেশ ও মিছিলের এক পর্যায়ে উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন এলাকার বৌদ্ধ মন্দির এবং বড়ুয়া সম্প্রদায়ের লোকজনের বাড়ি-ঘরে ব্যাপক হামলা ও ভাংচুর চালায় এবং ব্যাপকভাবে অগ্নিসংযোগ করে। এতে ১৩টি বৌদ্ধ মন্দির ও অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রসত্ম হয়। গতকাল ২ অক্টোবর দুপুরে সরেজমিনে রামু গিয়ে দেখা যায়, এখনো সেখানে পোড়া গন্ধ। বড়ুয়া অধ্যুষিত এলাকা ও মন্দিরগুলোতে ধ্বংস্তূপ চারিদিকে। রামু উপজেলা সদরের ব্যসত্ম এলাকা চৌমুহনী স্টেশনে গাড়ি থেকে নামতেই দেখা যায় যানবাহন চলাচল বেড়েছে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলেছে, জনগণও চলাচল করছে। কিন্তু কারো চেহারায় স্বাভাবিক অবস্থা নেই। সবাই যেন অত্যমত্ম চিমিত্মত এবং হারানোর ব্যথায় ব্যথিত। ২৯ সেপ্টেম্বর রাতের বিভীষিকাময় ঘটনার ব্যাপারে আলাপকালে রামু উপজেলা বৌদ্ধ কল্যাণ ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তরম্নন বড়ুয়া জানান, রামুতে এ ধরণের ঘটনা অকল্পনীয়। এখানকার অধিবাসী কখনোই ভাবতে পারেনি এখানে অরাজকতা, অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর, লুটপাটের ঘটনা এভাবে ঘটবে। এতে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী তথা বড়ুয়া সম্প্রদায়ের যে বিরাট ক্ষতি হয়েছে, তার চেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে এখানকার শত বছরের সম্প্রীতির। পাশাপাশি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের হাজার বছরের পুরনো মন্দির (ক্যাং), বৌদ্ধ ধাতু, স্বর্ণমূর্তি লুট হয়েছে তা আর কখনোই ফিরে পাওয়া যাবে না। তিনি বলেন বৌদ্ধ ধাতুটি একমাত্র রামুর সীমা বৌদ্ধ বিহারেই ছিল। আড়াই হাজার বছরের পুরনো বৌদ্ধ ধাতু এখান থেকে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন বৌদ্ধ দেশে নিয়ে যাওয়া হতো। ফলে সারা বিশ্বের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা এ বৌদ্ধ ধাতু থেকে বঞ্চিত হল। তাছাড়া এখানকার লাল চিং বৌদ্ধ বিহারের কারম্নকার্য পুরাকীর্তি সর্বোপরি বিহারটি যে ধ্বংস হয়ে গেছে তা আর কখনো পাওয়া যাবে না। পর্যটকরাও আর এ প্রাচীন বৌদ্ধ বিহার, মূর্তি, নির্মাণশৈলী দেখতে আর রামুতে আসবে না। এলেও দেখতে পারবে না। সর্বোপরি এ ধরনের কারম্নকার্য সম্বলিত এবং কাঠ ব্যবহার করে আর বৌদ্ধ বিহারও কোনদিন নির্মাণ করা যাবে না। উলেস্নখ্য লালচিং বৌদ্ধ বিহারটিও ছিল দেড়শ বছরের পুরনো। এছাড়া দেড়শ’ বছরের পুরনো অপর বৌদ্ধবিহারটি হচ্ছে বড় ক্যাং নামে পরিচিত। সেখানে যে স্বর্ণ মূর্তিগুলি ছিল তা লুট হয়ে গেছে এবং একশ’ ফুট দীর্ঘ যে বৌদ্ধ মুর্তিটি স্থাপনের প্রক্রিয়া চলছি তাও ক্ষতিগ্রসত্ম হয়েছে। অপরদিকে সীমা বিহারে সবচেয়ে মূল্যবান একটি সম্পদ পুড়ে ধ্বংস হয়ে গেছে। তা হল ঐ বিহারের ভামেত্ম কর্তৃক ত্রিপিটকের বাংলা অনুবাদের অসংখ্য বই। তিনি বলেন, এ ঘটনায় রামুতে সম্প্রীতির যে ঐতিহ্য ছিল তাতে চরম ফাটল ধরেছে। রামু চৌমুহনী সংলগ্ন সীমা বিহার এলাকায় অগ্নি সংযোগে ঘরবাড়ি ও সর্বস্ব হারানো অনঙ্গ বালা বড়ুয়া (৭০) গতকাল ২ অক্টোবরও পোড়া ভিটাতে বসে অশ্রম্ন বিসর্জন করছিলেন। আলাপকালে তিনি অশ্রম্নসিক্ত চোখে জানান জীবনেও ভাবতে পারেননি এ ধরনের ঘটনা ঘটবে। ’৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় যেখানে চারিদিকে ধ্বংসযজ্ঞ চলছিল তখনও তাদের এ এলাকায় এ ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটেনি। তিনি বলেন, রাতে হঠাৎ করে তাঁদের বাড়িঘরে প্রথমে হামলা হয়, তারপর লুটপাট, সর্বশেষ অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। সে রাতের বিভিষিকাময় ঘটনার আরো বর্ণনা দিলেন বাসু বড়ুয়া (৪০), প্রমিতা বড়ুয়া (২০)। রামু কলেজের বিএ প্রথম বর্ষের ছাত্রী লাবলী বড়ুয়া। তার সাথে কথা বলতে গেলে দেখা যায় তার চেহারা থেকে আতংক ভাব তখনও কাটেনি। তিনি জানান, যেভাবে তাদের বাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে তাতে তারা যে জীবনে রক্ষা পেয়েছেন তার জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছেন। ঘরে ঢুকে যখন লুটপাট এবং লোকজনের উপর হামলা চালাচ্ছিল, তখন নিজেকে রক্ষা করতে পারবেন কিনা সে ব্যাপারে অত্যমত্ম শংকিত ছিলেন। কিন্তু কোন প্রকারে পালিয়ে বেঁচেছেন।

No comments:

Post a Comment