Sunday, 7 October 2012

রামুর ঘটনা তদন্তে অগ্রগতি নেই


৭ অক্টোবর রোববার ২০১২ খ্রি. ২২ আশ্বিন ১৪১৯ সাল ‌২০ জিলক্বদ ১৪৩৩ হিজরি


উত্তম বড়ুয়া কোথায়রামুর ঘটনা তদন্তে অগ্রগতি নেই
মাহমুদ মনি, কক্সবাজার থেকে ॥
রামুর বৌদ্ধপল্লীতে সহিংসতার ঘটনা তদন্তের বিষয়ে নতুন কোনো অগ্রগতি নেই। তদন্তকারী কর্মকর্তারা মোটামুটি পাঁচটি বিষয় নিয়ে এগোচ্ছেন। কিন্তু বৌদ্ধপল্লীতে হামলার পর আট দিন অতিবাহিত হলেও ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তেমন কোনো নির্দিষ্ট পয়েন্টে পৌঁছাতে পারেন নি তদন্তকারী দলের সদস্যরা। অন্যদিকে অভিযুক্ত উত্তম বড়ুয়ারও কোনো হদিস করতে পারে নি পুলিশ। মোবাইল ফোনের কল থেকেও তার অবস্থান চিহ্নিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। শুক্রবার রাতে পুলিশের ৫টি টিম রামুর ফতেখাঁরকুল,চাকমারকুলচেরেংঘাটাসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায়। কিন্তু এসব অভিযান নিষ্ফল হয়। এদিকে রামুতে যে কম্পিউটারের দোকান থেকে ঘটনার সূত্রপাত সেই দোকানদার মোওমর ফারুককে গতকাল জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে ফারুক ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ দেয় বলে তদন্তকারী দলের সদস্য ও পুলিশের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
যোগাযোগ করা হলে রামু থানা পুলিশের এসআই উজ্জ্বল কান্তি দাশ গতকাল রাতে দৈনিক আজাদীকে বলেনযাকে কেন্দ্র করে এতোকিছু হলো ধরা তাকে পড়তেই হবে। আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেনপ্রকৃত ঘটনা জানার জন্য উত্তমকে খুঁজে বের করা খুব জরুরি।
এদিকে তদন্ত দলের একজন পুলিশ কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে দৈনিক আজাদীকে বলেনরামুর ঘটনা নিয়ে মিডিয়াগুলো ইচ্ছেমতো সংবাদ পরিবেশন করছে। এটা তদন্তকাজ বাধাগ্রস্ত করছে বলে মন্তব্য করেন ওই কর্মকর্তা।
প্রসঙ্গতফেসবুকের মাধ্যমে পবিত্র কোরআন অবমাননার অভিযোগে গত ২৯ সেপ্টেম্বর শনিবার রাতে রামুর বিভিন্ন বৌদ্ধ মন্দিরে হামলা চালানো হয়। এর পরদিন হামলা হয় উখিয়ার বিভিন্ন মন্দিরে। পবিত্র কোরআন অবমাননার ব্যাপারে অভিযুক্ত করা হয় স্থানীয় বাসিন্দা উত্তম কুমার বড়ুয়াকে। ঘটনার পর থেকেই পলাতক রয়েছে অভিযুক্ত উত্তম বড়ুয়া। অন্যদিকে মন্দিরে হামলার ক্ষেত্রে মূল সন্দেহের তীর জামায়াত ও তাদের ছাত্রসংগঠন শিবিরের দিকে। অভিযোগ রয়েছেপ্রথমে আওয়ামী লীগ ও তাদের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা মিছিল-সমাবেশ করলেও পরে সেটির নেতৃত্ব নিয়ে নেয় শিবির। স্থানীয়রা জানিয়েছেনঘটনার দিন রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত উত্তম বড়ুয়া রামুতেই ছিলেন। পরে তাকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেন স্থানীয় কিছু ব্যক্তি। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হওয়া রামু কেন্দ্রীয় সীমা বিহারের পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক তরুণ বড়ুয়া শুক্রবার জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানের কাছে অভিযোগ করেনউত্তমকে দিয়ে পরিকল্পিতভাবে ফেসবুকে ছবিটি যুক্ত করা হয়েছে। এ কারণে তাকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে রাখা হয়েছে।
এ বিষয়টি জানার পর স্থানীয় মুসলিম কমিউনিটিতে গতকাল ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রামুর চৌমুহনী এলাকার একাধিক বাসিন্দা এ প্রতিবেদককে বলেনযারা উত্তম বড়ুয়াকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছে তারা অন্যায়কে প্রশ্রয় দিচ্ছে। আমাদের নিরীহ লোকজনকে পুলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। উত্তম দোষী না হলে তার তো কোনো সমস্যা হবে না। আর যারা মন্দির ভেঙেছেঅগ্নিসংযোগ করেছে তাদেরও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই আমরা। কিন্তু সঠিক তদন্তের জন্য পুলিশের কাছে ধরা দিতে উত্তম বড়ুয়ার আপত্তি কেন।

No comments:

Post a Comment