samokal
উপসম্পাদকীয় আর্কাইভ
রামুর ঘটনা :কতিপয় প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ
এমএম আকাশ
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে উপর্যুপরি কয়েকটি
সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। চট্টগ্রামের হাটহাজারী, দিনাজপুরের চিরিরবন্দর,
সাতক্ষীরার
কালীগঞ্জ, পার্বত্য
চট্টগ্রামের রাঙামাটি শহর এবং সর্বশেষ
কক্সবাজারের রামু ও উখিয়ায় এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত
পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়েছে। বাড়িঘর ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে হামলা, অগি্নসংযোগ,
লুটপাট
এবং নাগরিকদের শারীরিক নির্যাতনের এসব ঘটনায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই ক্ষতিগ্রস্ত
হয়েছে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী। আমাদের দেশে হিন্দু ও আদিবাসী সম্প্রদায় বিভিন্ন সময়ে নির্যাতিত
হয়েছে, এটা আমরা দেখে
অভ্যস্ত। কিন্তু কক্সবাজারে আক্রমণের শিকার
হয়েছে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সদস্যরা,
যারা বাংলাদেশের জনগণের মোট সংখ্যার বিচারে নিতান্তই নগণ্য
সংখ্যক এবং যাদের ধর্মই হচ্ছে অহিংসা।কেন এমনটা হচ্ছে, এ নিয়ে সংবাদপত্র,
টেলিভিশন-বেতার
এবং নাগরিক সমাজে আলোচনা চলছে বিস্তর। এতে অংশ নিয়ে প্রধান রাজনৈতিক শক্তিগুলো পরস্পরের প্রতি দোষারোপ ও কাদা
ছোড়াছুড়ি করে চলেছে। কিন্তু প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিতকরণ ও শাস্তি প্রদানের বিষয়টি এখন পর্যন্ত সুস্পষ্টভাবে
প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ৬ অক্টোবর দৈনিক প্রথম আলোর শিরোনামে উল্লেখ করা হয়েছে, '৪০ হামলাকারী শনাক্ত,
মূলশক্তি
অজানা'।একটি বিষয় স্পষ্ট যে,
রাষ্ট্রের
দায়িত্ব হচ্ছে দেশের সব নাগরিক এবং বিশেষ করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও
সুবিধাবঞ্চিত নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত
করা। নৈতিকভাবে সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের দায়িত্ব হচ্ছে প্রতিবেশীদের নিরাপত্তার
বিষয়ে বিশেষভাবে মনোযোগী থাকা। বাংলাদেশে
প্রচলিত কোনো ধর্মেই অপর ধর্মের মানুষের ওপর অত্যাচার চালিয়ে যাওয়ার কথা বলে না।
লোকজ সংস্কৃতির প্রবণতাও হচ্ছে, সব ধর্মের মানুষের সঙ্গে মিলেমিশে বসবাস করার পক্ষে
অবস্থান গ্রহণ। 'আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম'_ শাহ আবদুল করিম বয়াতির এই গান থেকে এখন আমরা বুঝতে
পারি, এটা ক্রমশ অতীতের
বিষয়ে পরিণত হতে চলেছে। কেন এমনটি হচ্ছে? আমার মনে হয়,
উলি্লখিত
প্রতিটি ঘটনার পটভূমিতে সুনির্দিষ্ট একাধিক কারণ রয়েছে। এর কোনোটি অর্থনৈতিক,
কোনোটি
রাজনৈতিক এবং কোনোটি আন্তর্জাতিক। তবে এ কারণগুলো সক্রিয় হয়ে তখনই দুর্ঘটনা বা
বিপর্যয় ঘটাতে পারে যখন
সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের সাধারণ সদস্যদের মধ্যে অপর সম্প্রদায়কে রক্ষার ব্যাপারে
সাধারণ দায়িত্ববোধ হাল্কা হয়ে যায়
বা তারা কোনো না কোনো কারণে আবেগে অন্ধ হয়ে পড়ে। আমি এ কথা বলছি না যে, প্রতিবেশী সংখ্যালঘুদের প্রতি আমরা উদাসীন হয়ে পড়েছি। কিন্তু এটা
নিশ্চিতভাবেই বলতে পারি যে, নিজের জীবনের ঝুঁকি
নিয়ে আক্রান্ত সংখ্যালঘুদের
পাশে দাঁড়ানোর
ঘটনা ঘটেনি। অর্থাৎ আমরা দাঁড়াইনি। জনগণের সামাজিক মনস্তত্ত্ব যদি সেই মাত্রায় সক্রিয় থাকত, তাহলে এভাবে ঘটনা ঘটার
কথা নয়। আমাদের উপরিকাঠামো এবং শাসক শ্রেণীর মধ্যে সংখ্যালঘুদের রক্ষা করার
বিষয়টি নৈতিক দায়িত্ব হিসেবে
প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে না। কেউ তাদের ভোট ব্যাংক হিসেবে ব্যবহার করছে, কেউ কেউ তাদের সম্পর্কে হতাশ হয়ে সাম্প্রদায়িক শক্তির প্রতি সদয় স্নেহের হাত
বাড়িয়ে দিচ্ছে। এ ছাড়া ধর্মীয় জঙ্গিবাদী গোষ্ঠী তো আছেই, যারা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে এ দেশ থেকে বিতাড়িত বা
বিলুপ্ত করার অভিপ্রায় পোষণ করে এবং সেটা গোপন করে না। নিদেনপক্ষে সংখ্যালঘুদের
দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকের বেশি মর্যাদা যেন কোনোভাবেই দেওয়া না
হয়, সেটা নিশ্চিত করায় তারা তৎপর।
এ কথা ভুলে গেলে চলবে না যে, আমরা যখন পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের অধীনে ছিলাম তখনও
মুসলিম লীগের পাণ্ডারা হিন্দুদের ওপর অত্যাচার চালিয়েছে। স্বাধীন বাংলাদেশে আমরা
ধর্মনিরপেক্ষতাকে রাষ্ট্রীয় মূলনীতি হিসেবে ঘোষণা করেছি। আমাদের ঘোষিত লক্ষ্য_ সব ধর্মের সমান অধিকার। যে দলটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা
সংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়েছে, সেই আওয়ামী লীগই
এখন রাষ্ট্র ক্ষমতায়। অথচ তারা একটি স্বৈরাচারী দলের সঙ্গে ভোটের সমীকরণ ঠিক
রাখার জন্য আপস করে চলেছে। ঠিক এ কারণেই তারা সংবিধানে একটি স্ববিরোধী সংশোধনী এনে
'ধর্মনিরপেক্ষতা পুনর্বহালের' পাশাপাশি রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল রেখেছে। জঙ্গিবাদের
উত্থান নিয়ে সদা খোয়ারিরত খোদ যুক্তরাষ্ট্রও বাংলাদেশকে একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশ
হিসেবে নয়, বরং মডারেট মুসলিম
দেশ হিসেবে দেখতেই ইচ্ছুক। এমতাবস্থায় যে কোনো ধর্মীয় ইস্যুতে (যা সংখ্যাগুরু
সম্প্রদায়ের সেন্টিমেন্টে আঘাত করে) তাকে ব্যবহার করে সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার
চালানো সহজ হয়ে পড়ে। সুবিধাবাদী ও ষড়যন্ত্রকারীরা এসব ইস্যুর সুযোগ নিয়ে দেশকে
অস্থিতিশীল করায় সচেষ্ট থাকে। এ ছাড়া সবল ও ক্ষমতাবানদের সবসময়ই সংখ্যালঘুদের
সম্পদ করায়ত্ত করার প্রতি থাকে নজর। রাষ্ট্রযন্ত্র তখন হয়তো সংখ্যাগুরু
জনগোষ্ঠীর সেন্টিমেন্ট বিবেচনায় রেখে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নিশ্চুপ থাকে অথবা
বিশেষ ক্ষেত্রে সহায়তা প্রদান করে। কার্যত বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা এসব
কারণেই দীর্ঘদিন ধরে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। কেউ কেউ এতটাই নিরাপত্তাহীন বলে
নিজেকে ভাবেন যে, দেশ ছেড়ে অন্য
দেশে চলে যাচ্ছেন।
রাষ্ট্রের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতা
এ লেখার শুরুতে পর্যায়ক্রমিক যেসব ঘটনার উল্লেখ
করেছি তার প্রতিটি ক্ষেত্রেই সাধারণ যে সত্যটি প্রতিষ্ঠিত হয় সেটি হচ্ছে
রাষ্ট্রের নিজ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতা। সর্বশেষ রামু-উখিয়ার ঘটনা বিশ্লেষণ করলেও
আমার ওপরের বক্তব্যের যথার্থতা প্রতিষ্ঠিত হবে। রামুতে প্রধানত বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের
সম্পত্তি ও মঠ আক্রান্ত হয়েছে। পাশাপাশি কিছু হিন্দু মন্দিরও ভাংচুর হয়েছে।
আক্রমণের নেতৃত্ব দিয়েছে সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের একটি শক্তিশালী অংশ, যাদের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যরা এমনকি ঘটনার পর
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও নাগরিক সমাজের ব্যাপক উপস্থিতি সত্ত্বেও চিহ্নিত করতে ভয়
পায়। ক্ষমতাসীনরা ঘটনার পরপরই আঙুল তুলেছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির প্রতি।
জঙ্গিবাদীরাও নিশানায় রয়েছে। যুদ্ধাপরাধের দায়ে এখন বিচার চলছে জামায়াতে
ইসলামীর কয়েকজন শীর্ষ নেতার। আগামী ডিসেম্বরে এসব মামলার রায় হতে পারে, এমন শঙ্কা থেকে একাত্তরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর
সক্রিয় সহযোগী এ দলটিও নানা অঘটনের জন্ম দিতে পারে বলে সন্দেহ করা হয়ে থাকে।
রামু-উখিয়াতেও তা ঘটা সম্ভব বলে একটি জোরালো মত রয়েছে। প্রত্যুত্তরে বিএনপির
আঙুল আওয়ামী লীগের প্রতি। তারা একটি সংসদীয় প্রতিনিধি দলও পাঠিয়েছে ঘটনাস্থলে।
সব সূত্রে যতটুকু জানা যায় যে গোটা ঘটনাটি ছিল পূর্বপরিকল্পিত। বিভিন্ন গণমাধ্যম
বিশ্বস্ত সূত্রের উলেল্গখ করে জানাচ্ছে,
রামুতে
ট্রাক এবং অন্যান্য মোটরযানে করে কক্সবাজার ও অন্যান্য স্থান থেকে দুষ্কৃতকারীরা
এসে আক্রমণে অংশ নিয়েছে এবং তাদের হাতে এমন কিছু হাতিয়ার ছিল, যা সাধারণ মানুষের হাতে থাকে না। গান পাউডার ও
পাথর-কংক্রিটের খণ্ডের কথা আমরা বিশেষভাবে উল্লেখ করতে পারি। এটাও শোনা যায় যে, ফেসবুকে উস্কানিমূলক ছবি পাঠানো ছিল পরিকল্পিত এবং
তাকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। প্রশ্ন এটা নয় যে রামুর ঘটনা গভীর
ষড়যন্ত্র নাকি উত্তেজিত কিছু লোকের তাৎক্ষণিক ক্ষোভের প্রতিক্রিয়া। প্রশ্ন হচ্ছে, জনতাকে সংগঠিত ও
সুপরিকল্পিতভাবে উত্তেজিত করল কারা। যথারীতি এবারও এ প্রশ্নের উত্তর দিতে জাতি
দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে। কে দায়ী_
আওয়ামী
লীগ, না বিএনপি কিংবা
বিএনপির মিত্র মৌলবাদীরা? রাজশাহী
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক সহিংস ঘটনা থেকেও প্রশ্ন উঠেছে_ কে দায়ী,
ছাত্রলীগ
না ছাত্রশিবির? আমরা এ প্রশ্ন
উত্থাপন করতে ভুলে গেছি যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাকারী এবং গুণ্ডা বদমাশদের দলীয়
রাজনৈতিক পরিচয় গুরুত্বপূর্ণ নয়,
গুরুত্বপূর্ণ
হচ্ছে তাদের অপরাধের মাত্রা এবং অপরাধীদের পরিচয়। কিন্তু রাষ্ট্রের
কর্তাব্যক্তিরাও যখন দলীয় ভাষায় কথা বলতে থাকেন তখন তা সত্য হলেও সুষ্ঠু তদন্ত
পরিচালনা ও দোষীদের শাস্তি বিধানের কাজের পরিপন্থী হয়ে দাঁড়ায়। স্বাভাবিকভাবেই
প্রশ্ন আসে_ বর্তমানে আওয়ামী
লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায়। তাহলে কেন আক্রান্ত বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের
সদস্যরা দোষীদের চিহ্নিত করতে ভয় পাবে?
তাহলে
কি তাদের কেউ কেউ এ ঘটনায় জড়িত? আমি এ কথা বলছি না
যে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় পর্যায়ের কেউ এ ঘটনায় জড়িত। কিন্তু এ দলে
অনুপ্রবেশ করে কিংবা তাদের ছত্রছায়ায় থেকে সম্পত্তিলোভীরা এ রকম ঘটনা ঘটাতে
পারে। এ ধরনের অভিজ্ঞতা আমাদের রয়েছে। একই কথা বিএনপির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
বিশেষভাবে আমাদের খুঁজে দেখতে হবে জামায়াতে ইসলামীর ভূমিকা কী ছিল। কারণ আমি আগেই
বলেছি যে, তাদের ঘোষিত
রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সংখ্যালঘুমুক্ত বাংলাদেশ,
নূ্যনতম
লক্ষ্য অন্তত তাদের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হিসেবে অবদমিত রাখা। যুদ্ধাপরাধের
বিচার কাজের অগ্রগতিও তারা শ্যেনদৃষ্টিতে দেখছে বৈকি।
আন্তর্জাতিক প্রসঙ্গ
এরপর আন্তর্জাতিক কিছু প্রসঙ্গের অবতারণা করা যেতে
পারে। পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং ভারতের সেভেন সিস্টার নামে পরিচিত সাতটি রাজ্যে
আদিবাসীদের সমস্যা দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে জিয়াউর রহমানের
শাসনামলে দরিদ্র বাঙালিদের পুনর্বাসিত করতে গিয়ে যে ভূমি বিরোধের বীজ বপন করা হয়
সেই বিষবৃক্ষের ফল এখন আমরা ভোগ করছি। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী পার্বত্য
শান্তিচুক্তি করেছেন ঠিকই, ভূমি সমস্যা
সমাধানেরও নির্দেশ দিয়েছেন, কিন্তু তা কার্যকর
করার ক্ষমতা পার্বত্যবাসীর নেই এবং পার্বত্য অঞ্চলের সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসনও
এর অনুকূলে আছে বলে মনে হয় না। এ ছাড়া নানা ধরনের বহিঃশত্রুর চর ও গোয়েন্দা
সংস্থা এ অঞ্চলে তৎপর। অর্থ বিতরণের ঘটনাও ঘটে। ফলে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারীরা যে কোনো সময়ে কোনো ইস্যুকে কেন্দ্র করে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে চাইলে রাষ্ট্রের ভেতরের অবাঞ্ছিত এজেন্ট, গুপ্তচর ও বিদেশি অনুচরদের ব্যবহার করে সেটা করতে
পারে। এবারে কক্সবাজারে যে ঘটনাটি ঘটল সেখানে বহুদিন ধরে একটি আন্তর্জাতিক
উদ্বাস্তু সমস্যা বিদ্যমান ছিল। আমাদের পাশের দেশ মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত
মুসলমানরা কক্সবাজারে অনেক বছর ধরে বসবাস করছে। অতি সম্প্রতি মিয়ানমারে
সংখ্যাগুরু বৌদ্ধদের হাতে আক্রান্ত হওয়ার পর কিছু রোহিঙ্গা মুসলিম বাংলাদেশে
আশ্রয়প্রার্থী হয়। সরকার বুঝিয়ে-সুঝিয়ে তাদের কিছু সংখ্যককে ফেরত পাঠায়।
কিন্তু তাদের মারফত অত্যাচারের যে বিবরণ এখানে প্রচারিত হয়েছে তাতে এখানে অবস্থিত
রোহিঙ্গাদের মধ্যে কিছু বিদ্বেষ স্বাভাবিকভাবেই সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে ওই
এলাকায় মুসলিম এইড নামে একটি সংগঠন অর্থ বিতরণ করছে। ইসলামী ভাবাদর্শ প্রচারও
তাদের অন্যতম উদ্দেশ্য। আমি আগেই বলেছি যে,
বর্তমান
সরকার ভোটের সমীকরণ থেকে সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের প্রতি আপসমূলক মনোভাব পোষণ করে।
সম্প্রতি ওই এলাকায় বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ড্যান মজীনা এবং
যুক্তরাষ্ট্র থেকে আগত একটি প্রতিনিধি দলের সদস্যরা সফর করেছেন। ভারতের সংবাদপত্রে
প্রকাশিত হয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্র
বঙ্গোপসাগরে একটি নৌঘাঁটি স্থাপন করতে চায়। যুক্তরাষ্ট্র তা অস্বীকার করলেও সংশয়
কাটছে না। শোনা যায়, পার্বত্য
চট্টগ্রামে শক্তিশালী স্যাটেলাইট বসিয়ে যাবতীয় টেলিফোন বার্তা শোনা ও ধারণের
বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের আগ্রহ রয়েছে। আন্তর্জাতিক খবরদারি করায় প্রবলভাবে
বিশ্বাসী দেশটির পক্ষে এই আকাঙ্ক্ষা থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। সুতরাং এক কথায় বলা
যায়, সীমান্তবর্তী ও
আঞ্চলিকভাবে স্পর্শকাতর এ এলাকায় কোনো মহল যাতে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে না পারে
সেজন্য সরকারের তরফে থাকা উচিত ছিল বিশেষ সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক প্রস্তুতি। সরকার
সেটা করতে ব্যর্থ হয়েছে।
সমাধান কোন পথে?
দুর্ভাবনার বিষয় যে পুরো ঘটনা এখন দলীয় কাদা
ছোড়াছুড়ির পর্যায়ে এবং এর ফলে প্রকৃত দোষীরা নিরাপদে রাজনীতির ঘোলা জলে ডুব
মারতে সক্ষম হয়েছেন। তাই দ্রুত সমস্যার বীজ উৎপাটিত হবে, এমন সম্ভাবনা দেখা
যাচ্ছে না, বরং সাময়িকভাবে
আবার ভূ-নিম্নে লুক্কায়িত হয়ে হয়তো আবার কোনো এক সময়ে কোনো এক ফেসবুক কিংবা
অন্য কোনো তুচ্ছ অজুহাতে গণশত্রুরা তাদের নোংরা চেহারা নিয়ে পুনরায় আবির্ভূত
হবে। আমরা জানি, এ ধরনের
পরিস্থিতিতে সমাধান একটিই হতে পারে,
যাকে
ইংরেজিতে বলা হয়_ 'স্পেডকে স্পেড বলতে
শেখা'। যে বা যারা উস্কানি দিয়েছে, দাঙ্গা সংঘটিত করেছে,
শত শত
বছরের পুরাতন পুঁথি বোকার মতো আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে, শিশুর ওপর ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করেছে, গান পাউডার আগেভাগে মজুদ করে রেখে দ্রুত ঘটনাস্থলে
প্রেরণ করেছে, কূটবুদ্ধি দিয়ে
মোবাইলে ছবি প্রেরণ করেছে, রাষ্ট্রযন্ত্রের
দায়িত্বশীল অফিসার হয়েও যারা দায়িত্ব পালন করেননি_ তাদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিলে হয়তো এ
ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করা যেতে পারে। আর শাস্তিদানের সময় কে আওয়ামী লীগ, কে বিএনপি,
কে
ভোট ব্যাংকের অধিকারী এবং কে নয়, কে আন্তর্জাতিক
মদদে নাচে_ এসব দিক একপাশে
সরিয়ে রেখে আইনের পক্ষপাতহীন দৃষ্টির মাধ্যমে শাস্তি বিধানের উদ্যোগ নিতে হবে।
সমাধান হয়তো এ পথেই আছে।
ড. এমএম আকাশ : অর্থনীতিবিদ
অধ্যাপক,
ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়
No comments:
Post a Comment