Tuesday 9 October 2012

আসক ও টিআইবির পরিদর্শন রামুর বৌদ্ধ সম্প্রদায় নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন

Prothom Alo

আসক ও টিআইবির পরিদর্শন

রামুর বৌদ্ধ সম্প্রদায় নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন

আব্দুল কুদ্দুস, রামু থেকে ফিরে | তারিখ: ১০-১০-২০১২
রামুর বৌদ্ধপল্লি ও মন্দিরে হামলার ১০ দিন পরও আতঙ্ক কাটেনি। বৌদ্ধ সম্প্রদায় জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে এখনো উদ্বিগ্ন।
আদিবাসী ফোরাম টেকনাফ শাখার সভাপতি ক্য জ অং রাখাই গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে রামুর শ্রীকুল লালচিং বৌদ্ধমন্দিরে আলাপকালে এ উদ্বেগের কথা জানান। 
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের চেয়ারপারসন হামিদা হোসেন ও নির্বাহী পরিচালক সুলতানা কামালকেও একই কথা বলেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে হামিদা হোসেন বলেন, ‘বৌদ্ধমন্দিরে হামলার ঘটনা নিয়ে এখন রাজনীতির খেলা চলছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সেদিন বললেন, মন্দিরে হামলার আগের মিছিলে আওয়ামী লীগের যাঁরা ছিলেন, তাঁরা কিন্তু উসকানি দেননি। তাঁরা শুধু বলেছিলেন, মুসলমান হিসেবে আমাদের আপত্তি আছে। প্রকৃত অর্থে সেটা তো একটা উসকানিমূলক কথা।’
সুলতানা কামাল বলেন, ‘এখানে আজ যে বর্বরতার নজির দেখলাম, এটা যথেষ্ট উদ্বেগের কারণ। লজ্জিত বোধ করছি আমরা। মন্দিরে হামলার ঘটনা নিয়ে রাজনীতি হলে আসল অপরাধীরা পার পেয়ে যাবে। সংখ্যালঘুরা নিরাপত্তা হারিয়ে ফেলবে।’
বৌদ্ধমন্দির ও বসতবাড়িতে হামলার ঘটনা তদন্ত করতে আইন ও সালিশ কেন্দ্র গতকাল ঢাকা থেকে রামুতে আসে। সঙ্গে রয়েছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ বাংলাদেশের (আরআইবি) নির্বাহী পরিচালক মেঘনা গুহঠাকুরতা, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পরিচালক মো. নূর খান প্রমুখ।
রামুর মেরংলোয়া, বড়ুয়াপাড়া, শ্রীকুল, হাইটুপি গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, সংখ্যালঘুদের মনে এখনো আতঙ্ক রয়ে গেছে। পুড়ে যাওয়া মন্দিরগুলোতে টাঙানো হয়েছে ‘আমরা সংঘাত চাই না, শান্তি ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি চাই’সহ নানা স্লোগানের ব্যানার। তাঁরা অভিযোগ করেন, এখনো তাঁদের হুমকি-ধমকি ও ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তদন্ত দলটি বেলা তিনটায় হাইটুপি বড় রাখাইন মন্দিরে গেলে অনেকেই তাঁদের ক্ষোভের কথা জানান। মন্দির পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক উ থোয়াই চিং রাখাইন সুলতানা কামালকে কাছে পেয়ে কিছু প্রশ্ন করেন, ‘সরকার আমাদের এ রকম ১০টা মন্দির তৈরি করে দিতে পারবে। কিন্তু মনের ভেতরে যে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে, সেটি কি মুছে ফেলতে পারবে? পুলিশ আর বিজিবির পাহারা বসিয়ে আমরা কত দিন চলব? আমরা এ দেশে থাকব কী করে? হামলাকারীরা তো পার পেয়ে যাচ্ছে। আমাদের নিরাপত্তা কে দেবে?’
ইফতেখারুজ্জামান তাঁদের উদ্দেশে বলেন, ‘মন্দিরে হামলা বাংলাদেশের জন্য বড় লজ্জার বিষয়। আমরা আপনাদের ছেড়ে কোথাও যাব না।’ মন্দিরের ভিক্ষু উ পান্যা দিপা মহাথের বলেন, ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে দুর্বৃত্তরা এই মন্দিরে হামলা করে ৬০টির বেশি মূল্যবান বুদ্ধমূর্তি লুট করে। এখনো নানাভাবে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। আদিবাসী ফোরামের নেতা মং থোয়েং হ্লা বলেন, হুমকির কারণে গত কয়েক দিনে চার পরিবারের ১৮ জন সংখ্যালঘু মিয়ানমারে পালিয়ে গেছে। কক্সবাজার শহরে খাজা মঞ্জিল এলাকার ঘুনাপাড়া বৌদ্ধমন্দির পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। টেকনাফের খারাংখালী, মহেশখালীসহ বিভিন্ন বৌদ্ধপল্লির ঘরে ঘরে আতঙ্ক বিরাজ করছে। জায়গাজমি ও বসতবাড়ি থেকে সংখ্যালঘুদের উচ্ছেদের ভয় দেখানো হচ্ছে।
রামুর শ্রীকুলের সাদাচিং বৌদ্ধবিহার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক পলাশ বড়ুয়া বলেন, ‘মন্দিরে হামলা নিয়ে রাজনীতি চলছে। আওয়ামী লীগ-বিএনপি একে অপরকে দায়ী করছে। আমরা কোনো দলকে এ জন্য দায়ী করতে চাই না। আমরা চাই, প্রকৃত হামলাকারীরা ধরা পড়ুক। নইলে অপরাধীরা সহজে পার পেয়ে যাবে। বৌদ্ধপল্লিতে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা না হলে বহু সংখ্যালঘু পরিবার দেশ ছাড়তে বাধ্য হবে।’
রামুর বড়ুয়াপাড়ার কয়েকজন বলেন, ২৯ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে যারা বৌদ্ধমন্দির ও ঘরবাড়িতে হামলা চালিয়েছে, তাদের ছবি ও ভিডিও মানুষের হাতে হাতে। মুঠোফোনে এসব ছবি সাধারণ মানুষ দেখলেও প্রশাসন তাদের ধরছে না।
বৌদ্ধদের ধর্মীয় গুরু ও রামু কেন্দ্রীয় সীমাবিহারের অধ্যক্ষ সত্যপ্রিয় মহাথের বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী রামুর বৌদ্ধমন্দির পরিদর্শন করে হামলার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন। হামলাকারীদের চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তির আশ্বাস দিয়েছেন এবং এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে, তার ব্যবস্থা নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। আমরা আমাদের প্রজন্মের নিরাপত্তা চাই।’
রামু উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সোহেল সরওয়ার বলেন, বিএনপিদলীয় সাংসদ লুৎফর রহমানের উসকানিতেই মন্দিরে হামলা হয়েছে।
সাংসদ লুৎফর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতারা হামলা চালিয়ে বৌদ্ধমন্দির পুড়িয়ে দিয়েছে। আর প্রধানমন্ত্রী দায় চাপিয়ে দিলেন আমার ওপর। এতে প্রকৃত অপরাধীরা পার পেয়ে যাবে। আর সংখ্যালঘুরা নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়বে।’
রামু থানার ওসি সাখাওয়াত হোসেন বলেন, গতকাল ভোররাতে মন্দিরে হামলার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে উপজেলার উত্তর মিঠাছড়ি গ্রামের মনছুর আলী, মোস্তাক আহমদ, চা-বাগানের রেজাউল করিম ও চাকমারকুলের মো. মুবিনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

No comments:

Post a Comment