Sunday, 14 October 2012

সংখ্যালঘু মেরে রাজনীতি! হাটহাজারী দিনাজপুর সাতক্ষীরা রামু উখিয়া টেকনাফ পটিয়ার ঘটনা একই সূত্রে গাঁথা


সংখ্যালঘু মেরে রাজনীতি!
হাটহাজারী দিনাজপুর সাতক্ষীরা রামু উখিয়া টেকনাফ পটিয়ার ঘটনা একই সূত্রে গাঁথা
শংকর কুমার দে ॥ বিএনপি-জামায়াতের অপরাজনীতির পরিণতির সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের নির্মমতার শিকার হচ্ছেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। চট্টগ্রামের পটিয়া, কক্সবাজারের উখিয়া, রামু ও টেকনাফের ঘটনার আগেও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা লোভের বশীভূত হয়ে একের পর এক এ ধরনের মানবতাবিরোধী জঘন্য সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ঘটানো হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করতে পূর্বপরিকল্পিত নীলনকশা অনুযায়ী এ ধরনের সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস ঘটিয়ে তা আবার শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মতো ধামাচাপা দেয়ার ছক তৈরি করে রাখা হয়েছে। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের ওপর হামলা করে গানপাউডার ছিটিয়ে আগুন দিয়ে বাড়িঘর, বৌদ্ধবিহার ও মন্দির জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে মায়াকান্না দেখানোর জন্য ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আইওয়াশ দেয়ার মতো একটি তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করেছে বিএনপি। বিএনপি-জামায়াতের অতীত সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের অপরাজনীতির একের পর এক উদাহরণ থাকার পরও বিএনপি যে উদোরপি-ি বুধোর ঘাড়ে চাপাতে চেয়েছে তা পরিষ্কার হয়ে উঠেছে। 
চট্টগ্রামের হাটহাজারী, দিনাজপুরের চিরিরবন্দর, সাতক্ষীরা, পাবনাসহ বিভিন্ন স্থানে এ পর্যন্ত যেসব সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটেছে তার প্রতিটিতে ছিল জামায়াত-শিবিরের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ অংশগ্রহণ ও উস্কানি। এসব প্রতিটি ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদনে জামায়াতÑশিবিরের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। সর্বশেষ চট্টগ্রামের পটিয়া, কক্সবাজারের উখিয়া, টেকনাফের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের ওপর হামলা, আগুন দেয়া ও মন্দির-মূর্তি ভাংচুরের ঘটনায় জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া যাওয়ার পর পরই বিএনপি তদন্ত কমিটি গঠন করে গোটা ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা শুরু করে। স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি বিশেষ করে আওয়ামী লীগকে ভারতের দালাল বলে গালি দেয় বিএনপি-জামায়াত। আওয়ামী লীগ যদি ভারতের দালালই হয় তাহলে তারা সংখ্যালঘু হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের ওপর হামলা চালাবে না এটাই স্বাভাবিক। নির্বাচনের সময়ে সংখ্যালঘুরা আওয়ামী লীগকে ভোট দেয় বলে প্রচার চালিয়ে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ করার ঘটনার নজির অসংখ্য। বিএনপি-জামায়াত সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা, উপাসনালয়ে আগুন ও মন্দির-মূর্তি ভাংচুর করে এখন আওয়ামী লীগের ওপর দায় চাপানোর অপচেষ্টা করে যাচ্ছে আর এর মধ্যে দিয়ে তার অতীতের ঘটনাগুলোই প্রমাণ দেয়।
বিএনপি-জামায়াত ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার পর সারাদেশে হিন্দু ধর্মাবলম্বী সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা, নির্যাতন, ধর্ষণ, বাড়িঘর, লুটপাট, আগুন দেয়া থেকে শুরু করে পুকুরের মাছ, গোয়ালের গরু, থালা-বাসন লোটাকম্বল লুটপাট করে তাদের দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে। ‘৭০ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে জামায়াতের মানবতাবিরোধী জঘন্য ভূমিকার জন্য যুদ্ধাপরাধীর বিচার শুরু হয়েছে। ’৭৫ সালে সপরিবারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে জামায়াত যুদ্ধাপরাধীরদের সঙ্গে নিয়ে সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম সংযোজন করে ধর্মীয় উন্মাদনার সাম্প্রদায়িক রাজনীতি ঝাপি খুলে দেয়। বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার পর সাম্প্রদায়িক রাজনীতির অপকৌশল প্রয়োগ করতে জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাসবাদ শুরু করে। মিয়ানমার থেকে শরণার্থী হিসেবে আগত রোহিঙ্গাদের দলে দলে আশ্রয়-প্রশয় দিয়ে দলে ভিড়ায়। এসব ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদনে দেখা যায়, বিএনপি-জামায়াত যখনই রাজনীতিতে জনসমর্থনহীন হয়ে পড়ে তখনই তারা সাম্প্রদায়িক রাজনীতি, সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদসহ নানা অপকৌশলের শিকারের পরিণত করা হয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন চালিয়ে এক ঢিলে দুই পাখি মারা হয়। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস হয় এবং তারা নিরাপদ নয় বলে দেশে ও বিদেশে প্রচার করা হয়। দ্বিতীয়ত: বিএনপি-জামায়াত তাদের যুদ্ধাপরাধ, ধর্মান্ধতা ও জঙ্গীবাদের আশ্রয়-প্রশয় দেয়ার রাজনীতিকে আড়াল করার চেষ্টা করা হচ্ছে। যুদ্ধাপরাধীর বিচার শুরু হওয়ার পর এবার বিএনপি-জামায়াত চেষ্টা করেও সরকারবিরোধী জনমত গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়ে বার বার উগ্র মৌলবাদীদের দিয়ে ধর্মান্ধতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের পথ বেছে নেয়া হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে কোরান অবমাননার জের ধরে চট্টগ্রামের পটিয়া, কক্সবাজারের উখিয়া, টেকনাফ, রামুর ঘটনাও যে বিএনপি-জামায়াত যে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের তা-বলীলা ঘটিয়েছে তাতে ইতোমধ্যেই থলের বিড়াল বেরিয়ে আসতে শুরু করায় তদন্ত কমিটি গঠন করে তদন্ত প্রতিবেদন দিয়ে সরকারের ওপর দোষ চাপিয়ে পার পাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। 
দৈনিক জনকণ্ঠের নিজস্ব প্রতিবেদকরা সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের ঘটনার নেপথ্যের ঘটনা সম্পর্কে তুলে ধরেছেন তাদের প্রতিবেদনে।
দিনাজপুর থেকে সাজেদুর রহমান শিলু জানান, দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলা পল্লীতে জামায়াত নেতাদের উস্কানিতে ৩২টি হিন্দু পরিবারের বসতভিটায় হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার ২ মাস অতিবাহিত হলেও এখনও সেখানকার হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে আতঙ্ক কাটেনি। এসব ঘটনায় ১শ’ ৮৭ জনকে আসামি করা হলেও এখন পর্যন্ত মাত্র ২৪ জনকে আটক করেছে পুলিশ। এসব মামলার অন্যতম আসামি জেলা জামায়াতের সাবেক আমির ও চিরিরবন্দর উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ আফতাব উদ্দীন মোল্লাকে এখন পর্যন্ত আটক করতে পারেনি পুলিশ। আটক হয়নি এসব সন্ত্রাসী ঘটনায় নেতৃত্বদানকারী ব্যক্তিরা। পলাতক আসামিদের আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরও কোন লাভ হয়নি। হামলার শিকার লোকজনের অভিযোগ, মামলা প্রত্যাহারের জন্য জামায়াত ও শিবিরের নেতা-কর্মীরা তাদের বিভিন্নভাবে জয়ভীতি দেখাচ্ছে। 
৪ আগস্ট শনিবার ২০১২। স্থান দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার ৬ নং অমরপুর ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রাম। ওইদিন সকালে সেই গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের পরিবারগুলোর উপর মহা-প্রলয় নেমে আসে। জামায়াতের ইন্ধনে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা, মারপিট, লুটপাট, বসতবাড়িতে অগ্নিসংযোগ, শ্লীলতাহানি ও ব্যাপক সহিংসতার ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় ১৬ জন আহত হয়। মসজিদ নির্মাণকে কেন্দ্র করে হামলায় আক্রান্তরা ঘটনাটিকে একাত্তরের হানাদার বাহিনীর হামলার চেয়েও বর্বর ও নির্মম বলে উল্লেখ করেন। ১৪৪ ধারা জারি ও ২ শতাধিক পুলিশ, ২ প্লাটুন বিজিবি ও ২ গাড়ি র‌্যাব সদস্য মোতায়েন করার পরও সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কয়েক দফায় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের বসতবাড়ির ওপর হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর, মারপিট, লুটপাট, শ্লীলতাহানি ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটানো হয়। তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেফতার করা হয় ৮ জনকে। হামলার শিকার লোকজনদের অভিযোগ, জেলা জামায়াতের সাবেক আমির ও চিরিরবন্দর উপজেলা চেয়ারম্যানের উস্কানিমূলক বক্তব্যের পরই তাদের উপর হামলা চালানো হয়। হামলাকারীদের মধ্যে অনেকেই সরাসরি জামায়াত ও শিবিরের সঙ্গে জড়িত। 
জানা যায়, দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার ৬ নং অমরপুর ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের বলাইবাজার এলাকায় একটি অস্থায়ী মসজিদঘর ছিল। ওই মসজিদের জমির মালিক চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন কলেজের প্রফেসর হামিদা খাতুন তাঁর নিজ অর্থায়নে তা পাকাকরণের জন্য উদ্যোগ নেন। মসজিদ ঘরের স্থানে পাকা নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর করা হয়। কিন্তু মসজিদ ঘর থেকে ২শ’ গজ দূরে অনেক আগে থেকে একটি কালী মন্দির থাকায় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন মসজিদ ঘরটি ৫শ’ গজ দূরে নির্মাণ করার জন্য প্রস্তাব দেয়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বেশ কয়েকদিন ধরে সেখানে উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। ৩ আগস্ট শুক্রবার এই মসজিদ ঘর নির্মাণকে কেন্দ্র করে চিরিরবন্দর উপজেলা চেয়ারম্যান এবং জেলা জামায়াতের সাবেক আমির আফতাব উদ্দিন মোল্লা উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে জনসাধারণের মধ্যে ধর্মীয় অনুভূতি সৃষ্টি করেন। ফলে সেদিন ভোরে অসংখ্য লোক একত্রিত হয়। এদের মধ্যে অধিকাংশ লোক বহিরাগত ও জামায়াত শিবিরের সক্রিয় কর্মী। ৪ আগস্ট সকাল ১১টায় তারা রাজাবাজার গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের ১২টি বাড়িতে সেøাগান দিয়ে হামলা চালায়। তারা ১২টি বাড়ির লোকজনকে বেধড়ক মারপিট করে। সোভা রানী রায় (৩৫) নামে এক গৃহবধূ শ্লীলতাহানির শিকার হন। এসব বাড়িতে লুটপাট করে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দিয়ে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়। এতে ১৩ জন অগ্নিদগ্ধ হন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় ৫ জনকে দিনাজপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হামলার শিকার ভবেশ চন্দ্র রায় জানান, হামলাকারীরা সকলেই বহিরাগত। তাদের মধ্যে যে ২/১জনকে চেনা গেছে তারা সকলেই জামায়াত ও শিবির কর্মী। তিনি বলেন, স্থানীয় জামায়াত নেতা তৈয়ব হাজির নেতৃত্বে জামায়াতের কাদের, নিন্দালু, কামু, রফিকুল, রায়হান, লিয়াকত ও সুমনকে তিনি চিনতে পেরেছেন। 
ঘটনার সংবাদ পেয়ে পুলিশের রংপুর বিভাগীয় ডিআইজি বিনয় কৃষ্ণ বালা, দিনাজপুর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ আজিজুল ইমাম চৌধুরী, তৎকালীন জেলা প্রশাসক মোঃ জামাল উদ্দিন আহম্মেদ, পুলিশ সুপার ময়নুল ইসলাম ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে অনিদির্ষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করেন। ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে তাৎক্ষণিক ৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়। ইতোমধ্যে সেখানে মোতায়েন করা হয় ২ প্লাটুন বিজিবি, র‌্যাব-এর দুটি গাড়ি ও ২ শতাধিক পুলিশ সদস্য। এরই মধ্যে ওই চিহ্নিত মহলের মদদে লোকজন আবার একই ইউনিয়নের ছোট হাসিমপুর গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের ৪টি বাড়িতে হামলা চালিয়ে লুটপাট, মারপিট ও অগ্নিসংযোগ করে। এতে আরও ৪ জন আহত হয়। দুপুর ৩টায় লোকজন আবারও একই উপজেলার আব্দুলপুর ইউনিয়নের মাঝাপাড়া গ্রামে হিন্দুদের বাড়িতে হামলা চালানোর চেষ্টা করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিরোধের মুখে তাদের অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়। দায়িত্বে অবহেলার জন্য চিরিরবন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রশিদুল মোন্নাফ কবিরকে প্রত্যাহার করা হয়। এই ঘটনার পর সেখানে একটি অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প বসানো হয়। মসজিদ নির্মাণ কাজ আপাতত বন্ধ রাখা হয়। এই ঘটনায় দিনাজপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল মালেককে আহ্বায়ক করে জেলার সরকারী কৌঁসলি ওয়াহেদ আলী নবেল এবং এএসপি শাহিন হোসেন সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি প্রায় ১ মাস তদন্ত করে ৫২ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন জমা দেন। এই প্রতিবেদনে তারা ঘটনার সঙ্গে জামায়াতের সরাসরি জড়িত থাকার কথা উল্লেখ করেন।
এই ঘটনায় মোট ৩টি মামলা দায়ের করা হয়। এসব মামলায় আসামি করা হয় ১শ’ ৮৭ জনকে। পুলিশের উপর হামলা ও আহত করার অভিযোগে ৪ আগস্ট চিরিরবন্দর থানার এসআই আমিনুল ইসলাম বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-৭। এই মামলায় জেলা জামায়াতের সাবেক আমির ও চিরিরবন্দর উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ আফতাব উদ্দীন মোল্লাসহ ৬৪ জনকে আসামি করা হয়। মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা হলেন এসআই আজম আলী প্রধান। মামলাটি বর্তমানে তদন্তাধীন অবস্থায় রয়েছে। হিন্দু পরিবারের উপর হামলা, অগ্নিসংযোগ, মারপিট ও লুটপাটের অভিযোগে ৭ আগস্ট রাজাপুর গ্রামের সুভাস চন্দ্র রায় বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। মামলা নং-৮। এই মামলায় ১শ’ ১০ জনকে আসামি করা হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আমিনুল ইসলাম তদন্ত শেষে দ্রুত বিচার আইনে আদালতে মামলাটির চার্জশীট দাখিল করেন। এই মামলায় আসামি হিসেবে জেলা জামায়াতের সাবেক আমিরের নাম রয়েছে। একই অভিযোগে ৯ আগস্ট আব্দুলপুর গ্রামের দীনেশ চন্দ্র বাদী হয়ে ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলা নং-১০। এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর মোঃ হারেসুল ইসলাম তদন্ত শেষে দ্রুত বিচার আইনে আদালতে মামলাটির চার্জশীট দাখিল করেন।
এই মামলায়ও আসামি হিসেবে জেলা জামায়াতের সাবেক আমিরের নাম রয়েছে। এরই মধ্যে পুলিশ ২৪ জনকে গ্রেফতার করে। 
১ অক্টোবর সোমবার দিনাজপুর প্রথম শ্রেণীর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও দ্রুত বিচার আদালতের বিজ্ঞ বিচারক এএসএম তাসকিনুল হকের আদালতে এই চাঞ্চল্যকর ২টি মামলার দিন ধার্য ছিল। ১২ সেপ্টেম্বর আদালতের নির্দেশে দুটি জাতীয় পত্রিকায় পালিয়ে থাকা ১৬৪ আসামিকে হাজির হতে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আদেশ দেয়া হয়েছিল। উক্ত আদেশ অনুযায়ী দুটি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে আসামিদের হাজির হতে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। বিচারক মামলার পরবর্তী তারিখ আসামি ১৬ অক্টোবর ধার্য করে আটক আসামিদের জেলা কারাগারে প্রেরণের আদেশ দেয়। 
সাতক্ষীরা থেকে মিজানুর রহমান জানান, সাতক্ষীরার কালীগঞ্জের ফতেপুর ও চাকদাহ গ্রামে সংখ্যালঘু পরিবারের উপর ধর্মান্ধ মৌলবাদীদের হামলা, লুটপাট ও পুড়িযে দেয়ার ঘটনাটি ছিল পরিকল্পিত। মামলায় আটক বিভিন্ন আসামিকে পুলিশের কাছে দেয়া স্বীকারোক্তিতে এমনই তথ্য প্রকাশ পেলেও মামলা সংশ্লিষ্ট আইনজীবীদের অভিযোগ, আদালতে দাখিল করা কাগজপত্রের সঙ্গে সহিংস ঘটনার ফুটেজ ও স্টিল ছবি সংযুক্ত করা হয়নি। এমনকি রিমান্ডে নিয়ে আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে নামমাত্র। ফলে মামলার ভবিষ্যত নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। 
এদিকে সহিংস ঘটনায় দায়ের করা ৪টি মামলায় এ পর্যন্ত এজাহারভুক্ত ও এজাহার বহির্ভূত ফতেপুর ও চাকদাহের মামলায় ১শ’ ৩০ জন গ্রেফতার ও আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করেছে। বর্তমানে ছাত্রশিবির নেতা কালীগঞ্জের ফতেপুর গ্রামের ওমর ফারুখ ও চৌমুহুনী দারুল উলুম সিনিয়র মাদ্রাসার অধ্যক্ষ জামায়াত নেতা মাওলানা আব্দুল কাদের হেলালী, জাপা নেতা জুলফিকার সাঁফুইসহ কমপক্ষে ২৫ জন জেলহাজতে রয়েছে। দৈনিক দৃষ্টিপাতের দঃশ্রীপুর প্রতিনিধি শিবির ক্যাডার মিজানুর রহমান ও জেলহাজতে রয়েছে। ১৮ সেপ্টেম্বর বসন্তপুর গ্রামের শিবির নেতা শারাফাত হোসেন (চাকদাহে সহিংসতা চলাকালে অংশ নেয়া ছবি সংবলিত) ও ৮ অক্টোবর গণপতি গ্রামের শাহজামানকে আটক করার পর পুলিশ আর্থিক সুবিধা নিয়ে ছেড়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে এলাকাবাসী। এ ছাড়া গ্রেফতারকৃতদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের নামে সাধারণ মানুষের নাম বলিয়ে লাখ লাখ টাকা অর্থবাণিজ্য করার পাশাপাশি মামলার মেরিট নষ্ট করা হচ্ছে বলেও সিনিয়র আইনজীবীদের অভিযোগ। 
এদিকে ফতেপুর ও চাকদাহে সহিংসতার ঘটনায় হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত তদন্ত টিমের সদস্য যুগ্ম সচিব আবু ছালেহ শেখ মোঃ জহিরুল হক, উপসচিব মোস্তাফিজুর রহমান ও সিনিয়র সহকারী সচিব মাহাবুবর রহমান সাতক্ষীরা সার্কিট হাউসে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্য, সাংবাদিক, প্রশাসনের কর্মকর্তাসহ কমপক্ষে ৩০ জনের জবানবন্দী গ্রহণ করেন। দু’ দফা এই তদন্ত অনুষ্ঠিত হলেও সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক ড. মোঃ আনোয়ার হোসেন হাওলাদার শনিবার জনকণ্ঠকে বলেন, বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটির রিপোর্ট এখনও প্রকাশ পেয়েছে বলে তার জানা নেই। সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার মোঃ আসাদুজ্জামান বলেন, তিনিও তদন্ত কমিটির রিপোর্টের বিষয়ে কিছু জানেন না। আলোচিত ৪টি মামলার বর্তমান তদন্তকারী কর্মকর্তা দারোগা সোহরাব, বেলাল ও ইয়াছিনের কাছে শনিবার দুপুরে মামলার অগ্রগতি ও গ্রেফতারের সংখ্যা জানতে চাইলে তারা রাত ৮টার পর যোগাযোগ করার পরামর্শ দিয়ে বলেন, তারা এখন রেস্টে আছেন। 
কালীগঞ্জের ফতেপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মিতা রানীকে স্কুলে ডেকে এনে গ্রেফতার করে তৎকালীন থানার ওসি ফরিদ আহমেদ। একই সময়ে গ্রেফতার করা হয় প্রধান শিক্ষক রেজওয়ান হারুনকে। স্বাধীনতা দিবসের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ছাত্রদের অভিনীত একটি নাটকে নবীজি সম্পর্কে কটূক্তি করা হয়েছেÑ এই অভিযোগে দায়ের করা একটি মামলায় তাদের গ্রেফতার করা হলেও ৩১ মার্চ শনিবার কয়েক হাজার মানুষ হামলা চালিয়ে লুটপাট করে হাজতে আটক থাকা মিতা রানীর বসতবাড়ি আগুন জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেয় স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সদস্য আকুল মেম্বরসহ তার তিনভাই এর বসতবাড়ি। পোড়ানো হয় স্থানীয় সাংস্কৃতিক পরিষদ। ভেঙ্গে তছনছ করা হয় ফতেপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের চেয়ার, টেবিলসহ আসবাবপত্র। লুট করা হয় হাকিমের বাঁশতলা বাজারের কম্পিউটারের দোকান। ঘটনার দিন সকাল ১১টায় ইউনিয়নের বাইরে থেকে আসা কয়েক হাজার মানুষ এই অতর্কিত হামলায় অংশ নেয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ, হামলায় অংশ নেয়া অধিকাংশরাই ছিল বিভিন্ন মাদরাসার ছাত্র ও মৌলবাদী সংগঠনের সদস্য। অভিযোগ, হামলার সময় পুলিশের ভূমিকা ছিল রহস্যজনক। এর পর ১ এপ্রিল একই উপজেলার সীমান্তগ্রাম চাকদাহে পরিকল্পিতভাবে হামলা চালিয়ে সংখ্যালঘু পরিবারের ৭টি বাড়ি লুটপাট ও পুড়িয়ে দেয়া হয়। 
কালীগঞ্জ উপজেলার ফতেপুর হাইস্কুল মাঠে স্বাধীনতা দিবস, উদযাপন উপলক্ষে ২৭ মার্চ রাতে স্কুলমাঠে প্রখ্যাত সাহিত্যিক আবুল মুনসুর আহমেদের ‘হুজুর কেবলা’র গল্প অবলম্বনে মীর শাহিনুর হোসেন একটি নাটক মঞ্চস্থ করেন। নাটকে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স) সম্পর্কে কটূক্তির অভিযোগ সম্পর্কিত একটি রিপোর্ট ২৯ মার্চ সাতক্ষীরা থেকে প্রকাশিত দৈনিক দৃষ্টিপাত পত্রিকায় ছাপা হয়। এর পর পরই ধর্মান্ধদের হামলায় ও তা-বে পুড়তে থাকে কালীগঞ্জের ফতেপুর ও চাকদাহ গ্রাম। জেলা প্রশাসকের দেয়া একটি তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়, প্রকাশিত রিপোর্টে মহানবী (স) সম্পর্কে যে সংলাপের কথা লেখা হয়েছে প্রকৃতপক্ষে আবুল মুনসুর আহমদ রচিত ‘হুজুর কেবলা’ নামক গল্পে এ জাতীয় কোন শব্দাবলী নেই এবং গল্প অবলম্বনে রচিত নাটকের স্ক্রিপ্টে এ জাতীয় কোন শব্দ চয়ন করা হয়নি। এমনকি নাটকটির ভিডিওফুটেজে এ জাতীয় সংলাপের কোন অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি বলে উল্লেখ করে বলা হয়, এরূপ সংবাদে সাম্প্রদায়ীকতাকে উস্কে দেয়া হয়েছে। 
রিপোর্টে আরও বলা হয়, জেলার কালীগঞ্জ উপজেলায় উত্তেজিত জনতা ৩১ মার্চ ফতেপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ব্যাপক ভাংচুর চালিয়ে রাষ্ট্রীয় সম্পত্তির ক্ষতি করেছে। এ ছাড়া ৮টি পরিবারের ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে সাধারণ নিরীহ মানুষের সম্পত্তির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধনসহ জনমনে তীব্র আতঙ্কের সৃষ্টি করে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা মারত্মকভাবে ব্যাহত করে। এ ছাড়া এই ঘটনার ধারাবাহিকতায় প্রতিবেশী দেশের সীমান্ত হতে মাত্র ১ কিলোমিটার দূরে বসন্তপুর ইউনিয়নের চাকদহা গ্রামের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ৭টি পরিবারের ঘরবাড়িতে ১ এপ্রিল উত্তেজিত জনতা লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে ব্যাপক ক্ষতিসাধন করেছে। এ ঘটনায় সারাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মাঝে নিরাপত্তাহীনতার সৃষ্টি হয়েছে এবং সরকার বিব্রত হয়েছে। প্রশাসন চরম অবস্থার মুখোমুখি হয়েছে। সর্বোপরি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিঘিœত হয়েছে। এ কারণে স্থানীয় দৈনিকটির প্রকাশনার অনুমতি বাতিলও করা হয়। 
স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানের নাটকে নবীজি সম্পর্কে কি কটূক্তি করা হয়েছিল এ বিষয়টি এলাকার কারও কাছে স্পষ্ট না হলেও এই ঘটনার জন্য সংশ্লিষ্ট স্কুল প্রধান শিক্ষক, ম্যানেজিং কমিটির সহসভাপতি দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দিদারুল ইসলামসহ সকলে প্রকাশ্যে ক্ষমা প্রার্থনা করার ঘোষণা দেন। এর পরও এ ঘটনায় দক্ষিণ শ্রীপুর ইউপি সদস্য আবু জাফর সাঁপুই বাদী হয়ে বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি, তিনজন সদস্য, দু’জন শিক্ষক ও নাটক পরিচালনাকারীর নাম উল্লেখ করে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এ দিকে মামলা ও গ্রেফতারের ঘটনার পরও কৃষ্ণনগর, বালিয়াডাঙ্গা ও রামনগর গ্রাম থেকে কয়েক হাজার মানুষ লাঠি নিয়ে হামলিয়ে পড়ে ফতেপুর গ্রামে। কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান জামায়াত নেতা আনছার উদ্দিন, সাবেক চেয়ারম্যান জাপানেতা মোশারাফ হোসেনের নেতৃত্বে হাজার হাজার মানুষ হামলা চালিয়ে ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটালেও সেখানে থাকা পুলিশ সদস্যরা ছিল একেবারেই নির্বিকার। 
চাকদাহে মৌলবাদীদের পরিকল্পিত সহিংসতা ’৭১ সালের সহিংসতাকে হার মানিয়েছে বলে বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ মন্তব্য করেন। ভারতীয় দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি সুজিত কুমার ঘোষ এলাকা ঘুরে মন্তব্য করেন, একি ভয়াবহ দৃশ্য। সুজিত কুমার ঘোষ পরে ফতেপুর বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলেন । এর পরপরই তিনি দেখা করেন সেখানকার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে। তিনি সহিংসতার শিকার শিক্ষক মিতা রানী হাজরা, লক্ষ্মীপদ ম-ল, আনারুল ইসলাম আকুল মেম্বর, শাহীনুর রহমান, আব্দুল হাকিমসহ এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন। তাদের বাড়িঘরও সন্ত্রাসীরা ভাংচুর করে পুড়িয়ে দেয় । তাদের কাছ থেকে সেদিনের পৈশাচিক ঘটনার বর্ণনা শোনেন তিনি। 

বিএনপির তদন্ত প্রতিবেদন সম্পর্কে বনমন্ত্রী যা বলেছেন 
রামুতে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে এবং বসতিতে হামলার ঘটনায় তদন্তের নামে বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদ কক্সবাজারে গিয়ে পিকনিক করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন বন ও পরিবেশমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেছেন, নেতারা কক্সবাজারে গিয়ে ভাল হোটেলে থেকে, সমুদ্রসৈকতে মনের আনন্দে ঘুরে ঢাকায় ফিরে ৭২ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন দিয়েছেন খালেদা জিয়ার কাছে, যার নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে তারই এলাকায় হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীস্টানদের ওপর অতীতে অত্যাচার চালানো হয়েছে। শনিবার দুপুরে নগরীর শিল্পকলা একাডেমীতে আয়োজিত এক ছাত্রলীগ নেতার স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। সভায় বন ও পরিবেশমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া যাদের দিয়ে তদন্ত কমিটি বানিয়েছেন তাঁদের নেতৃত্বেই ২০০১ সালে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীস্টানদের ওপর নির্যাতন করা হয়েছে। ওই সময় মন্দির, গির্জা এবং বৌদ্ধ প্যাগোডায় আগুন দেয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, নৌকা মার্কায় ভোট দেয়ার অপরাধে ধর্ষণের মতো কাজও করা হয়েছে। আর এসব ঘটনায় ইন্ধনদাতারা কক্সবাজারে গিয়ে পিকনিক করে বেগম খালেদা জিয়ার সামনে প্রতিবেদন দিয়েছেন বলে বক্তব্যে অভিযোগ করেন মন্ত্রী। ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বৌদ্ধ মন্দিরে হামলা এবং অতীতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করা, সংখ্যালঘু নির্যাতন তার সবই এক সূত্রে গাঁথা। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার দেশ থেকে জঙ্গীবাদ নির্মূল, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আরও সুদৃঢ় করা এবং ঐক্যবদ্ধভাবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ করে যাচ্ছে। আর সরকারের এই প্রচেষ্টার কারণে দেশ আজ সব ক্ষেত্রেই এগিয়ে গেছে।

ধৃতদের স্বীকারোক্তি
নিজস্ব সংবাদদাতা কক্সবাজার থেকে জানান, রামুতে ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে বৌদ্ধ বিহার ও বসতিতে সহিংসতার ঘটনায় জড়িতদের আটকে জেলা পুলিশ প্রশাসনের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ওই অভিযানের অংশ হিসেবে গত শুক্র ও শনিবার ২ দিনে আরও ৬ জন আসামিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আটককৃতরা উখিয়ার কোর্টবাজারের পশ্চিম রতœা এলাকার মৃত গুরা মিয়ার পুত্র বোরহান, রামুর রাজারকুলের কাটালিয়া এলাকার আহাম্মদ কবিরের পুত্র আবুল হাশেম, একই এলাকা হাফেজপাড়ার মৃত পেয়ার মোহাম্মদের পুত্র ছৈয়দ আলম, উখিয়ার মরিচ্চা এলাকার সুলতানের পুত্র কামাল ও রামুর তেচ্ছিপুলের আশাকারপাড়া এলাকার নুরুল হকের পুত্র পিকআপচালক মোঃ রুবেল। আসামিদের আদালতে প্রেরণ করা হলে ধৃত বোরহান উদ্দিনকে শনিবার ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী নেয়া হয়। বোরহান তার দেয়া জবানবন্দীতে আদালতে ওই সহিংসতার ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে এবং ঘটনায় জড়িত আরও ৯ জনের নাম প্রকাশ করেছে। ধৃত পিকআপচালক রুবেলও তার দেয়া জবানবন্দীতে ঘটনার দিন তার পিকআপ ব্যবহার করে ও লোকজন আনানেয়ার কথা স্বীকার করে এবং জড়িত ৪ জনের নামসহ অজ্ঞাত আরও ১৫-২০ জনের নাম উল্লেখ করেছে আদালতে। একইভাবে আবুল হাশেম তার জবানবন্দীতে স্বীকারোক্তিমূলক বলেন, ঘটনার দিনে সে রামু পূর্ব কাটালিয়া পাড়ার সুধাংশু বড়ুয়ার বাড়িতে হামলা ও লুটপাটের ঘাটনায় জড়িত থাকার কথা। সে তার সঙ্গে ঘটনায় জড়িত আরও ১৮ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ধৃত আসামি কামাল পশ্চিম মরিচ্যা দিপঙ্কর বৌদ্ধ বিহারে জড়িত ৫ জনের নাম উল্লেখপূর্বক আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করেছে। 
উল্লেখ্য, গত ২৯ সেপ্টেম্বর রামুতে সহিংসতায় রাতে এবং পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে রামু, উখিয়া, টেকনাফের সহিংস ঘটনায় রামু থানায় ৪টি, উখিয়া থানায় ৪টি, সদর থানায় ৩টি ও টেকনাফ থানায় ২টিসহ সর্বমোট ১৬টি মামলা রুজু করা হয়। উক্ত মামলায় ৩২১ জন এজাহার নামীয়সহ অজ্ঞাত ১৪ হাজার ৯২৬ জনকে আসামি করা হয়। উক্ত আসামিদের মধ্য থেকে সর্বমোট এজাহারনামী ১৩০ জন এবং এজাহার বহির্ভূত তদন্তে প্রাপ্ত ৮৯ জনসহ সর্বমোট ২২০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। ঐ রাতে ঘটনাস্থলে যাতায়াতে ব্যবহৃত ২টি ট্রাক, একটি মিনি বাস ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আলামত জব্দ করা হয়েছে বলে পুলিশ জানায়।

No comments:

Post a Comment