৭ অক্টোবর রোববার ২০১২ খ্রি. ২২ আশ্বিন ১৪১৯ সাল
শেষ পাতা বিস্তারিত
সরকার পরিকল্পিতভাবে রামুর ঘটনা ঘটিয়েছে : খালেদা জিয়া ।।‘দেশ আজ বিশ্বচোর, বিশ্ববেহায়ার হাতে’
সরকার পরিকল্পিতভাবে রামুর ঘটনা ঘটিয়েছে দাবি করে এবং বর্তমান সরকারকে ‘বিশ্বচোর’ এবং এরশাদকে ‘বিশ্ববেহায়া’ আখ্যায়িত করে তাদের হাত থেকে দেশ রক্ষায় ঈদের পর আন্দোলনে নামার ঘোষণা দিয়েছেন চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া । তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, আন্দোলনে বাধা দেয়ার পরিণতি শুভ হবে না। গতকাল শনিবার বিকালে হবিগঞ্জে ১৮ দলীয় জোটের জনসভায় বিরোধী দলীয় নেতা এসব কথা বলেন। খবর বিডিনিউজের।
খালেদা বলেন, “আজ বিশ্বচোর ও বিশ্ববেহায়া এক হয়েছে। এদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করে গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করতে হবে। সামনে ঈদের পর আমরা নির্ভয়ে- নির্বিঘ্নে আন্দোলন শুরু করব। সরকার বাধা দিলে তার পরিণতি হবে ভয়াবহ ও কঠিন।” সবাইকে এ আন্দোলনে শরিক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ইনশাল্লাহ আন্দোলনে রাজপথে আপনাদের সঙ্গে আমার দেখা হবে। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি পূরণে জনমত গঠনের অংশ হিসেবে হবিগঞ্জে এই জনসভা করেন বিরোধী দলীয় নেতা। এর আগে গত ২৩ সেপ্টেম্বর দিনাজপুরের গোর-ই-শহীদ ময়দানে জনসভা করেছিলেন তিনি। সর্বশেষ ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে নির্বাচনী প্রচারণার অংশ হিসেবে হবিগঞ্জের পৌরসভা মাঠে খালেদা জিয়া জনসভা করেছিলেন।
শনিবার দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যে জনসভাস্থল ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। বিকাল ৪টা ৫৫ মিনিট থেকে শুরু হওয়া ৪৫ মিনিট স্থায়ী বক্তব্যে বিরোধী দলীয় নেতা দেশের বর্তমান পরিস্থিতি, আইনশৃঙ্খলা, অর্থনৈতিক অবস্থা, দুর্নীতি, পদ্মাসেতু প্রকল্প, বৌদ্ধ বিহারে হামলাসহ সরকারের ব্যর্থতার কথা তুলে ধরেন। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে দাবির যৌক্তিকতা তুলে ধরে খালেদা বলেন, আওয়ামী লীগের অধীনে এ যাবৎকালে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। তাই তাদের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না বলে আমরা মনে করি। সরকারকে বলব, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিয়ে প্রমাণ করুন আপনাদের জনপ্রিয়তা আছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পটভূমি তুলে ধরে তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে বিএনপি ক্ষমতায় ছিল, তখন আওয়ামী লীগের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন ছিল। এখন তারা ক্ষমতায়, তাই তাদের এখন আর সেই সরকারের প্রয়োজন নেই। বক্তৃতায় বিএনপি চেয়ারপারসন নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেন। বিরোধী দলীয় নেতা বলেন, নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ নয়। তারা আওয়ামী লীগের সুরে কথা বলে। তাই এই আজ্ঞাবহ কমিশনের অধীনে কোনো অবাধ ও সুষ্ঠু হতে পারে না।
বিরোধী দলের নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়াই বর্তমান দুর্নীতি দমন কমিশনের কাজ বলে অভিযোগ করেন খালেদা জিয়া। দুদকের কর্মকাণ্ড তুলে ধরে তিনি বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশনের কাজ হচ্ছে- কুমির, রাঘব- বোয়াল ও তিমি মাছ ধরা। কিন্তু তা না করে তারা বিরোধী দলের নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা দিচ্ছে। সরকারি দলের দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। দুদককে হুঁশিয়ার করে দিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, এভাবে দুর্নীতিবাজকে ধরা না হলে ভবিষ্যতে দুদককে ধরা হবে। কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।
অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা : অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসার সঙ্গে মন্ত্রী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা জড়িত রয়েছে- এমন অভিযোগ করে খালেদা জিয়া বলেন, সরকারের মন্ত্রী ও এমপিরা এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত হয়ে অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকা লুট করে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে। এ ব্যবসার সঙ্গে কেবল মন্ত্রীদের পাশাপাশি তাদের পরিবারের সদস্যরা জড়িত হয়ে গেছে।
হাসানুল হক ইনুর প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, নাম না-ই বললাম। সদ্য মন্ত্রী হওয়ায় এই বাম নেতার ছেলে ভিওআইপি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত হয়েছেন। বিটিআরসি মন্ত্রীর ছেলে বলে কোনো ব্যবস্থাও নিতে পারছে না। ওই বাম নেতা মুখে অনেক বড় বড় কথা বলেন।
রামুতে বৌদ্ধ বিহারে হামলা : খালেদা জিয়া কক্সবাজারের রামু, উখিয়ায় বৌদ্ধ বিহার ও বসতঘরে হামলার জন্য সরকার ও সরকার দলীয় লোকজনকে অভিযুক্ত করে বলেন, তাদের ধরা হচ্ছে না। উল্টো বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। দেশে বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতা সৃষ্টি করার লক্ষ্যে পরিকল্পিতভাবে সরকার এই ঘটনা ঘটিয়েছে বলে দাবি করেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
আওয়ামী লীগই জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষক : খালেদা জিয়া বলেন, আজ বিরোধীদলকে জঙ্গিবাদের সঙ্গে দোষারোপ করা হচ্ছে। এটা ঠিক নয়। বিএনপি কখনোই জঙ্গিবাদে বিশ্বাসী নয়। বরং আওয়ামী লীগ আমলেই দেশে সর্বত্র বোমাবাজি ও জঙ্গিবাদের ঘটনা ঘটেছিলো। বরং আমরাই বাংলা ভাই, জাতীয় দুলাভাই শায়খ আবদুর রহমানসহ বড় বড় জঙ্গিদের গ্রেপ্তার করে তাদের বিচারের আওতায় এনেছিলাম।
রেলমন্ত্রীর অর্থ কেলেঙ্কারি : বিএনপি চেয়ারপারসন অভিযোগ করেন, শুধু সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত নয়, অন্যান্য মন্ত্রীরাও দুর্নীতি করছে। আর প্রধানমন্ত্রীর পরিবার তো সব জায়গায় আছেনই। বিচার বিভাগে দলীয়করণের অভিযোগ করে তিনি বলেন, আজ বিচারপতিরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না। উপর থেকে কাকে রিমান্ডে নিতে হবে, কাকে জেলে নিতে হবে ইত্যাদি সব নিদের্শনা দেয়া হচ্ছে। বিচারকরা অসহায়। তাই বিচার বিভাগে জনগণ ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। মহীউদ্দীন খান আলমগীরকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী করার সমালোচনা করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী।
খালেদা জিয়া বলেন, ১/১১ তে দুর্নীতির অভিযোগে বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ১৭ বছরের জেল হয়েছিল। তাকে এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়ায় তিনি এখন সব জায়গা থেকে চাঁদা তুলবেন। বর্তমান সরকারের আমলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন বিরোধী দলীয় নেতা। তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালে আওয়ামী লীগ ৪টি পত্রিকার রেখে সব পত্রিকা বন্ধ করে দিয়েছে। এখন তারা সেই পথ অনুসরণ করছে না; তবে ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া ও পত্রিকায় কোন নিউজটা যাবে, কোনটা যাবে না, তা বলে দেয়া হয়। জেলা বিএনপির সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ ফয়সলের সভাপতিত্বে জনসভায় অন্যান্যের মধ্যে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, সহসভাপতি শমসের মবিন চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু, যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, বরকত উল্লাহ বুলু, মোহাম্মদ শাহজাহান, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন,সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ডাঃ সাখাওয়াত হাসান জীবন, বিরোধী দলীয় প্রধান হুইপ জয়নুল আবেদিন ফারুক, সাংসদ শেখ সুজাত মিয়া, শাম্মী আখতার, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র জি কে গউছসহ স্থানীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন।
১৮ দলীয় জোট নেতাদের মধ্যে বক্তব্য দেন জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মজিবুর রহমান,খেলাফত মজলিশের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মুহাম্মদ ইসহাক, মহাসচিব আহমেদ আবদুল কাদের, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির সভাপতি অলি আহমেদ, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, জামায়াতে ইসলামীর জেলা আমীর মাওলানা মুখলেছুর রহমান, খেলাফত মজলিশের জেলা সভাপতি মাওলানা আব্দুল বাসেত আজাদ প্রমুখ।
জনসভা শেষ করে খালেদা জিয়া সার্কিট হাউজে যান। সেখানে কিছুসময় থেকে রাত ৮টার দিকে তিনি ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন।
No comments:
Post a Comment