প্রতিবাদে উড়বে না ফানুস
কক্সবাজারের বৌদ্ধবিহারে হামলা ও অগি্নসংযোগের প্রতিবাদে এ বছর প্রবারণা পূর্ণিমায় ফানুস না ওড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন শেষে সোমবার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ সম্মিলিত বৌদ্ধ সমাজের সংবাদ সম্মেলনে বৌদ্ধ সমাজের সভাপতি অজিত রঞ্জন বড়ুয়া বলেন, বৌদ্ধবিহার ও বসতিতে নারকীয় হামলা ও অগি্নসংযোগের প্রতিবাদে বাংলাদেশের সব বৌদ্ধবিহারে এবার প্রবারণা পূর্ণিমায় ফানুস উত্তোলন থেকে বিরত থাকা হবে। পাশাপাশি কঠিন চীবরদান অনুষ্ঠান হবে অনাড়ম্বর। সব ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও বর্জন করবেন এ সম্প্রদায়ের লোকজন।
লিখিত বক্তব্যে অজিত রঞ্জন বড়ুয়া বলেন, যথাসময়ে ঘটনা প্রতিহত করতে প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার কারণেই রামুর শতাব্দীপ্রাচীন সভ্যতা ও সংস্কৃতির নিদর্শন ধ্বংস হয়ে গেছে। প্রাচীন বিহার ও বুদ্ধমূর্তি ধ্বংস করে দুষ্কৃতকারীরা প্রশাসনের নাকের ডগায় উল্লাস করতে করতে চলে যায়।
ফেসবুকে কোরআন অবমাননার অভিযোগে গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে কক্সবাজারের রামুতে বৌদ্ধ মন্দির ও ঘরবাড়িতে হামলা, অগি্নসংযোগ ও ভাংচুর চালায় ধর্মীয় উগ্রপন্থিরা। রাতভর
হামলায় সাতটি বৌদ্ধ মন্দির, অন্তত ৩০টি বাড়ি ও দোকান পুড়িয়ে দেওয়া হয়। হামলা, ভাংচুর ও লুটপাট চালানো হয় আরও শতাধিক বাড়ি ও দোকানে।
পরদিন চট্টগ্রামের পটিয়া এবং কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফেও হামলার ঘটনা ঘটে।
বাংলাদেশের বৌদ্ধরা ভীতি ও আতঙ্কের মধ্যে বসবাস করছেন জানিয়ে লিখিত বক্তব্যে সরকারের কাছে আট দফা দাবি জানানো হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো_ বৌদ্ধদের আতঙ্ক দূর না হওয়া পর্যন্ত দেশের সব বৌদ্ধবিহারে পুলিশ-র্যাব ও বিজিবি মোতায়েন এবং ধ্বংসপ্রাপ্ত বিহারের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করা।
রামু থানার তৎকালীন ওসিকে আইনের আওতায় এনে তার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদ থাকলে শাস্তির দাবি জানান তারা। রামু থানার তৎকালীন ওসিকে প্রত্যাহার করে বর্তমানে যে ওসিকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তিনিও বিতর্কিত উল্লেখ করে তাকেও প্রত্যাহার করে নেওয়ার দাবি জানান নেতারা।
এদিকে, দুষ্কৃতকারীদের আইনের আওতায় আনা এবং বৌদ্ধ ও মুসলমানদের মধ্যে বিশ্বাস ও আস্থার সংকট দূর করতে রামুতে সর্বদলীয় শান্তি সম্মেলনের ব্যবস্থা করারও দাবি জানান তারা।
এদিকে, কারা কী উদ্দেশ্যে এ আক্রমণ করেছে, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে বৌদ্ধধর্মীয় নেতা ড. বিকিরণ প্রসাদ বড়ূয়া বলেন, এ আক্রমণ হয়েছে শুধু বৌদ্ধবিহারে; কোনো বৌদ্ধভিক্ষু বা ব্যক্তির ওপর নয়। হামলা পরিকল্পিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রত্যক্ষদর্শীরা অনেককে চেনে, কিন্তু কারও নাম বলে সমস্যায় পড়তে চাইছে না। বিরোধী দল বিএনপির তদন্ত রিপোর্ট নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা রাজনৈতিক ব্যাপার। আমরা এর ঊধর্ে্ব থাকতে চাই।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বৌদ্ধ সমাজ নেতা আদর্শ কুমার বড়ুয়া, অনিল কুমার বড়ুয়া, অমলেন্দু বিকাশ বড়ুয়া, অধ্যাপক মৃণাল কান্তি বড়ুয়া প্রমুখ।
No comments:
Post a Comment