
প্রথম পাতা
ইন্ধনদাতারা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে

কক্সবাজারের রামুতে বৌদ্ধ উপাসনালয়ে হামলার ঘটনার নেপথ্য নায়কদের খুঁজে বের করতে গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে হামলাকারী অনেকেই শনাক্ত হলেও ইন্ধনদাতারা ধরাছোঁয়ার বাইরে। আটক সন্দেহভাজনদের জবানবন্দি, প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য ও বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ ইন্ধনদাতাদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে। জড়িতদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। সোমবার প্রধানমন্ত্রীর রামু সফরের আগেই ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারীদের গ্রেফতারের লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নেমেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। গতকাল শনিবার আরও ৩ জনকে আটক করা হয়। তারা হলেন_ রামুর ফতেখাঁরকুল এলাকার মোকতার আহমদের দুই ছেলে জসিম উদ্দিন ও জালাল এবং রামুর শ্রীকুলের নূর মোহাম্মদের ছেলে ওমর ফারুক। জানা গেছে, পরিকল্পনাকারীদের তথ্য পুলিশের হাতে রয়েছে।
এদিকে গতকাল রামুর ফকিরাবাজারে 'ফারুক কম্পিউটার টেলিকম'-এর মালিক ফারুককে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। ওই দোকানের ফেসবুক থেকেই বিতর্কিত সেই ছবি বের করা হয়।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ফারুক জানান, উত্তম কুমার বড়ূয়া তার ফেসবুক ফ্রেন্ড। বড়ূয়ার ফেসবুকে তিনিই প্রথম সে বিতর্কিত ছবিটি দেখতে পান। এরপর তিনি বিতর্কিত ওই ছবিটি প্রথমে দোকানের আশপাশের লোকজনকে ডেকে দেখান।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার সেলিম মো. জাহাঙ্গীর জানিয়েছেন, রামু, উখিয়া ও টেকনাফে সহিংস ঘটনায় ১৪টি মামলা হয়েছে। এতে জড়িত সন্দেহে এ পর্যন্ত ১৯৪ জনকে আটক করা হয়েছে। হামলায় জড়িত অর্ধশত ব্যক্তিকে শনাক্ত করা গেছে। তাদের প্রায় সবাই এখন গা-ঢাকা দিয়েছে। তিনি জানান, প্রাথমিক তদন্তে এটা নিশ্চিত হওয়া গেছে যে পরিকল্পিতভাবে এ হামলা হয়েছে। মূল পরিকল্পনাকারীদের ব্যাপারেও অনেক তথ্য পুলিশের হাতে এসেছে। সূত্র জানায়, উপাসনালয়ে হামলার পেছনে রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরওএস), কক্সবাজারে তিন বিদেশি এনজিওর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কি-না তা গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ওই দুই সংগঠনের বেশ কয়েক কর্তাব্যক্তি গোয়েন্দা নজরদারিতে রয়েছেন।
কক্সবাজার জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বাবুল আখতার সমকালকে বলেন, নেপথ্য নায়কদের খুঁজে বের করার এখন প্রধান টার্গেট। জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।
রামুর ঘটনায় আজ বেশ কয়েকজন ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার কথা রয়েছে। গ্রেফতারকৃতের মধ্যে ১০৫ জনকে রিমান্ডে আনা হয়েছে।
এদিকে রামুর সহিংস ঘটনায় ব্যবহৃত গাড়িগুলো আটক করতে পুলিশের বিশেষ টিম কাজ করছে। ইতিমধ্যে ২টি ট্রাক এবং ১টি মিনিবাস আটক করেছে পুলিশ। একই সঙ্গে আটক হয়েছে ২ ড্রাইভার এবং ২ হেলপারও। ট্রাক হেলপার রমজান আলীকে ডিবি পুলিশের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
ট্রাকড্রাইভার রফিকুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়েছে কি-না পুলিশের পক্ষ থেকে এখনও কিছু জানানো হয়নি। নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, জেকে এন্টাপ্রাইজের মালিকানাধীন ২টি ট্রাক রামুর ঘটনায় হামলাকারীদের পরিবহনে নিয়োজিত ছিল।
তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, ফেসবুকে কোরআন শরিফ অবমাননার ছবি পাওয়ার খবর প্রচার করার পর ২৯ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ৯টায় প্রথম একটি মিছিল বের করা হয়। মিছিলে নেতৃত্ব দেন ছাত্রলীগের সাবেক নেতা নুরুল ইসলাম সেলিম, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা আনসারুল হক ভুট্টো, যুবলীগ নেতা বাবু, জামায়াত নেতা মাওলানা হাসান, হাফেজ আহমদ। পরে তারা রামু চৌমুহনীতে সমাবেশ করেন। মিছিল-সমাবেশের বাইরে থেকে তৎপর দেখা গেছে জামায়াত নেতা মনির এবং বাহাদুরকে। তাদের কাউকে পুলিশ এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি। হামলায় নেতৃত্ব দিয়েছেন শ্রীকুলের ইউপি মেম্বার মিজানুর রহমান, তার সহযোগী রকিব উদ্দিন, রামুর বিএনপি নেতা জাহিদ, জামায়াত নেতা ছালামত উল্লাহ কাদের, শিবির নেতা শহীদুল ইসলাম বাহাদুর, ছাত্রদলের সাবেক নেতা আফছার কামাল, কামাল উদ্দিন, আতিক, রোহিঙ্গা গ্রুপের নেতা হাফেজ মোহাম্মদ, এনামুল হক, জাবেদসহ আরও কয়েক জন।
ওসি নজিবুল চট্টগ্রামে পুলিশ হেফাজতে : ক্ষতিগ্রস্তদের অভিযোগ, রামুতে হামলার সময় ওসি নজিবুল ইসলামের ভূমিকা ছিল রহস্যজনক। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, ওসি নজিবুল বর্তমানে চট্টগ্রামে পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন।
উখিয়ায় ফের ১৪৪ ধারা জারি : কক্সবাজারের উখিয়ায় শুক্রবার ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করে নেওয়া হলেও গতকাল শনিবার থেকে ফের জারি করা হয়েছে। ওসি আপ্পেলা রাজু নাহা জানিয়েছেন, বিরাজমান পরিস্থিতির কারণে সন্ধ্যা ৬টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত উখিয়ায় ১৪৪ ধারা বলবৎ করা হয়েছে।
টেকনাফে ২৩ আসামিকে আদালতে প্রেরণ : টেকনাফে বৌদ্ধপল্লীতে ভাংচুর, লুটপাট ও অগি্নসংযোগের ঘটনায় আটক ২৩ আসামির দু'দিনের রিমান্ড গতকাল শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী। তাদের ফের আদালতে ফেরত পাঠানো হয়েছে। তিনি জানান, কয়েক আসামি ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।
হিন্দুদের বিক্ষোভ সমাবেশ : রামু, উখিয়া ও টেকনাফে অগি্নসংযোগ ও ভাংচুরে ক্ষতিগ্রস্ত হিন্দুমন্দির সংস্কারে প্রশাসনিক কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করা এবং প্রধানমন্ত্রীর সোমবারের সফরে হিন্দু ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কোনো বৈঠকের কর্মসূচি না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কক্সবাজার জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দ। কক্সবাজার শহরে শনিবার পূজা উদযাপন পরিষদের বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা বলেন, সংখ্যালঘু এলাকায় এখনও হুমকি দেওয়া হচ্ছে। জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট রণজিত দাশের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক বাবুল শর্মার পরিচালনায় বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক সোমেশ্বর চক্রবর্তী। বক্তব্য রাখেন পরিষদের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট দিলীপ কুমার আচার্য, সহসভাপতি ভারপ্রাপ্ত পৌর মেয়র রাজবিহারী দাশ, জেলা জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদের সভাপতি দুলাল চক্রবর্তী, পূজা কমিটির উপদেষ্টা শিক্ষাবিদ রাজবিহারী চৌধুরী, সহসভাপতি রতন দাশ, উদয়শঙ্কর পাল মিঠু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপক শর্মা দীপু, আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট প্রতিভা দাশ, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সংরক্ষণ সম্পাদক রাধাগোবিন্দ ব্রহ্মচারী, সদর উপজেলা যুগ্ম আহ্বায়ক বলরাম দাশ অনুপম, টেকনাফ উপজেলা আহ্বায়ক শিবুপদ ভট্টাচার্য, জেলা কমিটির সদস্য রতন কান্তি দে, উখিয়া উপজেলা আহ্বায়ক স্বপন শর্মা রনি ও রামু উপজেলা যুগ্ম আহ্বায়ক অপূর্ব পাল। বিক্ষোভ সমাবেশে ৩০ সেপ্টেম্বর রাতে অগি্নকাণ্ড ও ভাংচুরে ক্ষতিগ্রস্ত মন্দির এবং বসতবাড়ির ছবিসহ তালিকা প্রকাশ করা হয়।
No comments:
Post a Comment