ঢাকা, সোমবার, ১৫ অক্টোবর ২০১২, ৩০ আশ্বিন ১৪১৯, ২৮ জিলকদ ১৪৩
ঢাকা, সোমবার, ১৫ অক্টোবর ২০১২, ৩০ আশ্বিন ১৪১৯, ২৮ জিলকদ ১৪৩
সাদাসিধে কথা
দুঃখ, লজ্জা এবং ক্ষোভ
মুহম্মদ জাফর ইকবাল | তারিখ: ১৫-১০-২০১২
কয়েক দিন ধরে মনটা খুব খারাপ—শুধু আমার নয়, আমার ধারণা, পুরো দেশের প্রায় সব মানুষেরই মন খারাপ। একজন নয়, দুজন নয়—প্রায় ছয়-সাত হাজার মানুষ এসে শতবর্ষের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী ১২টি বৌদ্ধবিহার পুড়িয়ে দিয়ে গেল? যার অর্থ এই দেশে অন্তত ছয়-সাত হাজার মানুষ আছে, যারা বিশ্বাস করে ভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষের উপাসনালয় পুড়িয়ে দেওয়া যায়। যারা পুড়িয়েছে, তারা নাকি বেশির ভাগই তরুণ। যে বয়সে বুকের ভেতর স্বপ্ন জন্ম নেয়, মানুষের জন্য ভালোবাসা জন্ম নেয়, সেই বয়সে তারা এসে এ রকম ভয়ংকর একটি ঘটনা ঘটিয়ে যেতে পারল? শুধু কি উপাসনালয়, তারা বেছে বেছে শুধু বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের বাসাও পুড়িয়ে দিয়ে গেছে। সেই বাসায় যারা ছিল শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণী, তাদের বুকের ভেতর যে আতঙ্ক আর হতাশার জন্ম দিয়ে গেছে, এই দেশ কি কখনো তাদের সেই আতঙ্ক আর হতাশা মুছে দিতে পারবে?
ঘটনাটি ঘটে যাওয়ার পর বহুদিন আমি খবরের কাগজ পড়তে পারিনি—সেগুলো জমিয়ে রেখেছি। আমি না পড়লেই তো সেই ভয়ংকর তথ্যগুলো অদৃশ্য হয়ে যাবে না, তাই সাহস সঞ্চয় করে একসময় শুধু একটু একটু করে পড়েছি। পড়ে হতবুদ্ধি হয়ে যাচ্ছি, কিছুতেই হিসাব মেলাতে পারছি না।
ঘটনাটি শুরু হয়েছে ফেসবুকে পবিত্র কোরআন শরিফ অবমাননার একটি ছবি ‘ট্যাগ’ করা থেকে। পৃথিবীতে ১০০ কোটি মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করে, আমি সেই ১০০ কোটি মানুষের একজন নই (শুনেছি আমার নামে নাকি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট আছে, আমার সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই), তাই ছবি ‘ট্যাগ’ করা মানে কী, আমি জানতাম না। খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি, আমাকে দেখানোর জন্য কেউ আমার ফেসবুকে একটা ছবি পাঠাতে পারে এবং সেটা স্বাভাবিক নিয়মে আমি তো দেখতেই পাব, আমার ফেসবুক বন্ধুরাও দেখতে পাবে (মনে রাখতে হবে ‘বন্ধু’ এবং ‘ফেসবুক বন্ধু’ অনেকটা গণতন্ত্র এবং আইয়ুব খানের মৌলিক গণতন্ত্রের মতো)। যারা ফেসবুক করে তাদের সবারই চেষ্টা থাকে ফেসবুক বন্ধুদের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য। তাই তারা সবাই যে সত্যিকার বন্ধু এবং কারও মনে কোনো দুরভিসন্ধি নেই, সেটা নিশ্চিত করা খুব কঠিন। কাজেই কোনো একজন ‘ফেসবুক বন্ধু’ যদি আমার কাছে খুব একটা আপত্তিকর ছবি পাঠিয়ে বসে থাকে তাহলে আমার অন্য ‘ফেসবুক বন্ধু’রাও অবাক বিস্ময়ে দেখবে আমি একটি আপত্তিকর ছবি আমার ফেসবুক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে প্রচার করে বেড়াচ্ছি—যদিও সেখানে আসলে আমার বিন্দুমাত্র ভূমিকা নেই। রামুতে ঠিক সে রকম একটা ঘটনা ঘটেছিল, একজন বৌদ্ধধর্মাবলম্বী তরুণের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে কোনো একজন পবিত্র কোরআন শরিফ অবমাননার একটা ছবি ট্যাগ করিয়ে সেটি অন্যদের দেখার ব্যবস্থা করে দিল। তরুণটির ‘ফেসবুক বন্ধু’ সেই ছবিটি দেখে শুধু নিজেরাই ক্ষিপ্ত হলো না, সেটি অন্যদের দেখিয়ে তাদেরও ক্ষিপ্ত হওয়ার সুযোগ করে দিল।
এর পরের ঘটনাগুলোর মধ্যে অনেক রহস্য। কিন্তু মানুষজন শুধু বৌদ্ধধর্মাবলম্বী সেই তরুণের ওপর ক্ষিপ্ত হলো না, তারা বৌদ্ধধর্মাবলম্বী সব মানুষের ওপর ক্ষিপ্ত হলো। এ রকম সময়ে সবচেয়ে বড় দায়িত্ব পালন করতে হয় রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকে, উত্তেজিত মানুষদের শান্ত করে পুরো অবস্থাটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। কিন্তু আমরা খবরের কাগজে অবাক হয়ে দেখলাম, বিএনপিদলীয় সাংসদ বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করলেন। আওয়ামী লীগ ধর্মনিরপেক্ষ দল-সরকার, তাই সবচেয়ে বড় দায়িত্ব তাদের, তারাও সাচ্চা মুসলমান হওয়ার এই সুযোগটা ছাড়ল না, তাদের সব সংগঠন মিছিল বের করে স্লোগান ছিল, ‘বড়ুয়াদের দুই গালে, জুতা মারো তালে তালে’। তার চেয়ে ভয়ংকর তথ্য পুলিশদের নিয়ে, তারা বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের রক্ষা করার চেষ্টা দূরে থাকুক বরং উত্তেজিত মানুষদের উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দেওয়ার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।
প্রশাসন, সরকারি দল, বিরোধী দল—সবাই যদি বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের বিরুদ্ধে একতাবদ্ধ হয়ে যায়, তাহলে জামায়াতে ইসলামী, ধর্মান্ধ, রোহিঙ্গা জঙ্গি—তারা এই সুযোগটি কেন ছেড়ে দেবে? বাস, ট্রাক, মোটরসাইকেল—হাজার হাজার লোক হাজির করে ফেলল। রীতিমতো উৎসব করে তারা একটি নয়, দুটি নয়, ১২টি বৌদ্ধবিহার পুড়িয়ে দিল। ২০০১ সালে তালেবান যখন আফগানিস্তানের বামিয়ানে বৌদ্ধমূর্তিগুলো ধ্বংস করছিল, সেই দৃশ্যটি আমার ভেতরে যে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছিল, রামুর ঘটনা তার থেকে অনেক বেশি ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। অনেক কষ্টে পাওয়া আমাদের এই দেশটিকে নিয়ে আমাদের কত ভালোবাসা, কত স্বপ্ন, মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সারা পৃথিবীর সামনে আমাদের দেশের মুখে যে কালিমা লেপে দেওয়া হলো, সেটি কি আমরা এত সহজে মুছে ফেলতে পারব?
ঘটনা সেখানেই শেষ নয়। আমরা ভেবেছিলেন এ রকম ভয়ংকর একটা ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ে সবাই সতর্ক হয়ে যাবে। কিন্তু হতবাক হয়ে দেখলাম, এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে লাগল, পরের দিন উখিয়া আর পটিয়াতে একই ঘটনা ঘটতে লাগল। শুধু বৌদ্ধবিহার নয়, হিন্দুমন্দির পুড়িয়ে দেওয়া শুরু হয়ে গেল।
রাজনৈতিক দলগুলো এই উন্মত্ততা থামানোর কোনো চেষ্টা করছে বলে মনে হলো না। কারণ, আমরা অবাক বিস্ময়ে আবিষ্কার করলাম তারা একে অপরকে গালাগাল করার কাজে লেগে গেল। এর চেয়ে বড় হূদয়হীন ব্যাপার আর কী হতে পারে?
২.
একটা দেশ কেমন চলছে সেটা বোঝার সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে সেই দেশের সংখ্যালঘুদের দেশ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা। তারা যদি মনে করে তারা নিরাপদে আছে, দেশের অন্য দশজন মানুষের মতো তারাও তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারছে, তাহলে বুঝতে হবে দেশটা ভালো চলছে। যদি দেখা যায়, তাদের ভেতর একধরনের হতাশা, অনিশ্চয়তা আর আতঙ্ক, তাহলে প্রতি মাসে একটা করে পদ্মা সেতু তৈরি করলেও বুঝতে হবে দেশটি ভালো নেই।
আমি নিজে কোনো জরিপ করিনি, কিন্তু তার পরও আমি জানি এই দেশের সংখ্যালঘুরা ভালো নেই। জাতিসংঘে চাকরি করে লাখ লাখ টাকা কামাই করতে যেন কোনো অসুবিধে না হয়, সেটা নিশ্চিত করার জন্য সরকার যেদিন ঘোষণা দিল, এই দেশে আদিবাসী বলে কেউ নেই, সেদিন শুধু আদিবাসীরা নয়, সংখ্যালঘুরাও হতাশায় দীর্ঘশ্বাস ফেলেছে। যে রাজনৈতিক নেতারা আদিবাসীদের অধিকার নিয়ে কথা বলতে বলতে একসময় মুখে ফেনা তুলে ফেলেছেন, এখন তাঁরাই যখন চোখের পানি না ফেলে অম্লান বদনে বলেন, এই দেশে কোনো আদিবাসী নেই, তখন আমি হতবাক হয়ে তাঁদের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকি। (যাঁরা এখনো জানেন না তাঁদের মনে করিয়ে দিই, আদিবাসী মানে নয় যারা আদি থেকে বাস করছে, ইংরেজি ইনডিজেনিয়াস শব্দটির বাংলা প্রতিশব্দ হিসেবে আদিবাসী শব্দটা ব্যবহার করা হয়, যার অর্থ মূল ধারা থেকে আলাদাভাবে থেকে যারা তাদের আদি ঐতিহ্যকে ধরে বেঁচে থাকে।)
এই দেশে সংখ্যালঘুরা যে ভালো নেই, তার খুব বড় একটা প্রমাণ কয়েক দিন আগে পত্রিকায় বের হয়েছিল, সেখানে লেখা হয়েছিল, এই দেশে হিন্দুদের সংখ্যা খুব দ্রুত কমে যাচ্ছে। আমরা সবাই সেই প্রতিবেদনটি দেখেও না দেখার ভান করেছি, পত্রপত্রিকার কোথাও সেটা নিয়ে কারও আলোচনা বা মন্তব্য চোখে পড়েনি। মনে হয় সবাই ধরে নিয়েছে এ রকমই তো হওয়ার কথা! এই দেশে আহমদিয়াদের ওপর নিয়মিত হামলা হয়, ২০০১ সালের নির্বাচনে চারদলীয় জোট বিজয়ী হলে হিন্দুদের ওপর একটা পৈশাচিক নিপীড়ন চালিয়েছিল, এবার প্রথমবারের মতো বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের ওপর হামলা হলো, তাহলে কি তাদেরও এই দেশ থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার কূটকৌশল শুরু হয়েছে? মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর যে নিপীড়ন চলছে, এই দেশে বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের ওপর অত্যাচার করে তার একটা বদলা নেব, সেটাই কি উদ্দেশ্য? (একটা জিনিস কি কেউ লক্ষ করেছে, মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মহান নেতা সারা পৃথিবীতে সম্মানিত, নোবেল বিজয়ী অং সান সু চি কিন্তু তাঁদের দেশে রোহিঙ্গাদের ওপর যে অত্যাচার হচ্ছে, সেই বিষয়ে কখনো মুখ খোলেন না?)
৩.
আমি আমার সারা জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে যে কয়টি সত্য আবিষ্কার করেছি তার একটি মাত্র দুটি শব্দ ব্যবহার করে লিখে ফেলা যায়, সেটি হচ্ছে, ‘বৈচিত্র্যেই সৌন্দর্য’। আমি এটা প্রথম স্পষ্টভাবে টের পেয়েছিলাম যুক্তরাষ্ট্রে। আমি বেল কমিউনিকেশনস রিসার্চের যে গ্রুপে কাজ করতাম, সেখানে প্রায় সব দেশেরই এক-দুজন করে লোক ছিল। পৃথিবীর নানা প্রান্তের নানা দেশের মানুষ সবাই যুক্তরাষ্ট্রকে নিজের দেশ হিসেবে গ্রহণ করে মহানন্দে পাশাপাশি বাস করছে। (শুধু আমার মনে হয় কোনো সমস্যা আছে, তা না হলে দেশের আকাশ কালো করে আসা মেঘ, ঝমঝম বৃষ্টি আর ব্যাঙের ডাক শোনার জন্য কেন এত মন কেমন কেমন করত কে জানে!) যুক্তরাষ্ট্রের অনেক বড় বড় সমস্যা আছে (যেমন সেই দেশের কালো পুরুষ মানুষের বেশির ভাগ জেলে থাকে) তার পরও বলতে হবে এই দেশের সবচেয়ে বড় শক্তি হচ্ছে পাশাপাশি ভিন্ন ভিন্ন (ডাইভারসিটি) ধরনের মানুষের বেঁচে থাকা। তারা নিজের দেশের ঐতিহ্য বা কালচারকে ছুড়ে ফেলেনি, সেগুলোকে ধরে রেখেই সবাই মিলে পাশাপাশি বাস করেছে। যারা আমার কথা বিশ্বাস করতে চায় না তাদের বলব সেখানকার চায়না টাউন ঘুরে আসতে। আমার খুব মজা লাগে যখন দেখি সেখানে আজকাল বাংলা টাউনও তৈরি হতে শুরু করেছে। আমার বুকটা ভেঙে যায় যখন দেখি এই দেশে আমরা আমাদের শিশুদের পুরোপুরি উল্টো জিনিস শিখিয়ে বড় করি, তাদের আমরা শেখাই, ‘আমার থেকে ভিন্ন মানে আমার থেকে খারাপ।’ অথচ সত্যি কথাটি হচ্ছে, আমার থেকে ভিন্ন কাউকে পাওয়ার অর্থ হচ্ছে পৃথিবীটাকে আরেকটু সুন্দর করে দেখার একটা সুযোগ।
আমার সব সময় মনে হয়, আমাদের দেশে মানুষের মধ্যে বৈচিত্র্য (ডাইভারসিটি) বলতে গেলে নেই। আমাদের খুব দুর্ভাগ্য, আমাদের দেশে ভিন্ন ভিন্ন ধর্ম, ভিন্ন ভিন্ন কালচার, ভিন্ন ভিন্ন গায়ের রং, ভিন্ন ভিন্ন চেহারা, ভিন্ন ভিন্ন ভাষার মানুষ খুব কম। তাই যে কয়জন আছে তাদের আমাদের বুক আগলে রাখার কথা, আমাদের লক্ষ রাখার কথা তারা যেন তাদের ভাষার চর্চা করতে পারে, তাদের সংস্কৃতিটাকে ধরে রাখতে পারে, তাদের ধর্ম নির্ভয়ে পালন করতে পারে। আগের প্রজন্মের অনেকেই বড় ধরনের ভুল ধারণা নিয়ে বড় হয়েছে। আমাদের বাচ্চাদের পাঠ্যবইয়ে কিছুদিন আগেও আদিবাসী বা সংখ্যালঘু এমনকি মেয়েদের নিয়ে কী অসম্মানজনক কথা লিখে রাখা হতো, সেটা কি কেউ লক্ষ করেছে? আস্তে আস্তে সেগুলো পাল্টানো হচ্ছে। আমার খুব বিশ্বাস করার ইচ্ছে যে আমাদের নতুন প্রজন্ম বড় হবে অনেক উদার মনের, আমরা পৃথিবীর যে সৌন্দর্য দেখতে পারিনি। ভিন্ন ভিন্ন মানুষের মধ্যে তারা সেই সৌন্দর্য দেখতে পাবে। রামু, উখিয়া ও পটিয়ায় যে ভয়ংকর ঘটনা ঘটেছে, সেটা যেন এই দেশের মানুষের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, আমাদের আরও অনেক সতর্ক হতে হবে। নতুন প্রজন্মকে একেবারে শৈশব থেকে ভিন্ন ধর্ম, ভিন্ন সংস্কৃতি, ভিন্ন ঐতিহ্যকে সম্মান করা শেখাতে হবে।
এই দেশে যাঁরা বৌদ্ধধর্মাবলম্বী তাঁরা নিশ্চয়ই তাঁদের মনের ভেতর একটি গভীর বেদনা নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন। আমি তাঁদের বলতে চাই, তাঁরা যেন হতাশাগ্রস্ত না হন, রামুর সেই ভয়ংকর রাতেও কিছু মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উন্মত্ত ধর্মান্ধদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল। এই দেশে এ রকম অসংখ্য মানুষ আছে, তারাই হচ্ছে এই দেশের শক্তি। এই দেশের মানুষ সাম্প্রদায়িক নয়, আমি নিশ্চিত ছাই হয়ে যাওয়া ফিনিক্স পাখি যে রকম আবার নতুন জন্ম নিয়ে পাখা মেলে দাঁড়ায়, এই দেশের অসাম্প্রদায়িক চেতনাও সেভাবে পাখা মেলে দাঁড়াবে।
মুক্তিযুদ্ধে হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান যেভাবে পাশাপাশি যুদ্ধ করে বুকের রক্ত দিয়ে দেশটাকে স্বাধীন করেছে, ঠিক সেভাবে আবার সবাই মিলে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে এই দেশ থেকে চিরদিনের জন্য সাম্প্রদায়িকতার বিষ দাঁত টেনে উপড়ে তুলে ফেলতে হবে। তা না হলে বাংলাদেশ নামের দেশটিই তো অর্থহীন হয়ে যাবে।
মুহম্মদ জাফর ইকবাল: লেখক। অধ্যাপক, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
ঘটনাটি ঘটে যাওয়ার পর বহুদিন আমি খবরের কাগজ পড়তে পারিনি—সেগুলো জমিয়ে রেখেছি। আমি না পড়লেই তো সেই ভয়ংকর তথ্যগুলো অদৃশ্য হয়ে যাবে না, তাই সাহস সঞ্চয় করে একসময় শুধু একটু একটু করে পড়েছি। পড়ে হতবুদ্ধি হয়ে যাচ্ছি, কিছুতেই হিসাব মেলাতে পারছি না।
ঘটনাটি শুরু হয়েছে ফেসবুকে পবিত্র কোরআন শরিফ অবমাননার একটি ছবি ‘ট্যাগ’ করা থেকে। পৃথিবীতে ১০০ কোটি মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করে, আমি সেই ১০০ কোটি মানুষের একজন নই (শুনেছি আমার নামে নাকি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট আছে, আমার সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই), তাই ছবি ‘ট্যাগ’ করা মানে কী, আমি জানতাম না। খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি, আমাকে দেখানোর জন্য কেউ আমার ফেসবুকে একটা ছবি পাঠাতে পারে এবং সেটা স্বাভাবিক নিয়মে আমি তো দেখতেই পাব, আমার ফেসবুক বন্ধুরাও দেখতে পাবে (মনে রাখতে হবে ‘বন্ধু’ এবং ‘ফেসবুক বন্ধু’ অনেকটা গণতন্ত্র এবং আইয়ুব খানের মৌলিক গণতন্ত্রের মতো)। যারা ফেসবুক করে তাদের সবারই চেষ্টা থাকে ফেসবুক বন্ধুদের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য। তাই তারা সবাই যে সত্যিকার বন্ধু এবং কারও মনে কোনো দুরভিসন্ধি নেই, সেটা নিশ্চিত করা খুব কঠিন। কাজেই কোনো একজন ‘ফেসবুক বন্ধু’ যদি আমার কাছে খুব একটা আপত্তিকর ছবি পাঠিয়ে বসে থাকে তাহলে আমার অন্য ‘ফেসবুক বন্ধু’রাও অবাক বিস্ময়ে দেখবে আমি একটি আপত্তিকর ছবি আমার ফেসবুক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে প্রচার করে বেড়াচ্ছি—যদিও সেখানে আসলে আমার বিন্দুমাত্র ভূমিকা নেই। রামুতে ঠিক সে রকম একটা ঘটনা ঘটেছিল, একজন বৌদ্ধধর্মাবলম্বী তরুণের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে কোনো একজন পবিত্র কোরআন শরিফ অবমাননার একটা ছবি ট্যাগ করিয়ে সেটি অন্যদের দেখার ব্যবস্থা করে দিল। তরুণটির ‘ফেসবুক বন্ধু’ সেই ছবিটি দেখে শুধু নিজেরাই ক্ষিপ্ত হলো না, সেটি অন্যদের দেখিয়ে তাদেরও ক্ষিপ্ত হওয়ার সুযোগ করে দিল।
এর পরের ঘটনাগুলোর মধ্যে অনেক রহস্য। কিন্তু মানুষজন শুধু বৌদ্ধধর্মাবলম্বী সেই তরুণের ওপর ক্ষিপ্ত হলো না, তারা বৌদ্ধধর্মাবলম্বী সব মানুষের ওপর ক্ষিপ্ত হলো। এ রকম সময়ে সবচেয়ে বড় দায়িত্ব পালন করতে হয় রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকে, উত্তেজিত মানুষদের শান্ত করে পুরো অবস্থাটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। কিন্তু আমরা খবরের কাগজে অবাক হয়ে দেখলাম, বিএনপিদলীয় সাংসদ বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করলেন। আওয়ামী লীগ ধর্মনিরপেক্ষ দল-সরকার, তাই সবচেয়ে বড় দায়িত্ব তাদের, তারাও সাচ্চা মুসলমান হওয়ার এই সুযোগটা ছাড়ল না, তাদের সব সংগঠন মিছিল বের করে স্লোগান ছিল, ‘বড়ুয়াদের দুই গালে, জুতা মারো তালে তালে’। তার চেয়ে ভয়ংকর তথ্য পুলিশদের নিয়ে, তারা বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের রক্ষা করার চেষ্টা দূরে থাকুক বরং উত্তেজিত মানুষদের উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দেওয়ার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।
প্রশাসন, সরকারি দল, বিরোধী দল—সবাই যদি বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের বিরুদ্ধে একতাবদ্ধ হয়ে যায়, তাহলে জামায়াতে ইসলামী, ধর্মান্ধ, রোহিঙ্গা জঙ্গি—তারা এই সুযোগটি কেন ছেড়ে দেবে? বাস, ট্রাক, মোটরসাইকেল—হাজার হাজার লোক হাজির করে ফেলল। রীতিমতো উৎসব করে তারা একটি নয়, দুটি নয়, ১২টি বৌদ্ধবিহার পুড়িয়ে দিল। ২০০১ সালে তালেবান যখন আফগানিস্তানের বামিয়ানে বৌদ্ধমূর্তিগুলো ধ্বংস করছিল, সেই দৃশ্যটি আমার ভেতরে যে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছিল, রামুর ঘটনা তার থেকে অনেক বেশি ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। অনেক কষ্টে পাওয়া আমাদের এই দেশটিকে নিয়ে আমাদের কত ভালোবাসা, কত স্বপ্ন, মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সারা পৃথিবীর সামনে আমাদের দেশের মুখে যে কালিমা লেপে দেওয়া হলো, সেটি কি আমরা এত সহজে মুছে ফেলতে পারব?
ঘটনা সেখানেই শেষ নয়। আমরা ভেবেছিলেন এ রকম ভয়ংকর একটা ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ে সবাই সতর্ক হয়ে যাবে। কিন্তু হতবাক হয়ে দেখলাম, এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে লাগল, পরের দিন উখিয়া আর পটিয়াতে একই ঘটনা ঘটতে লাগল। শুধু বৌদ্ধবিহার নয়, হিন্দুমন্দির পুড়িয়ে দেওয়া শুরু হয়ে গেল।
রাজনৈতিক দলগুলো এই উন্মত্ততা থামানোর কোনো চেষ্টা করছে বলে মনে হলো না। কারণ, আমরা অবাক বিস্ময়ে আবিষ্কার করলাম তারা একে অপরকে গালাগাল করার কাজে লেগে গেল। এর চেয়ে বড় হূদয়হীন ব্যাপার আর কী হতে পারে?
২.
একটা দেশ কেমন চলছে সেটা বোঝার সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে সেই দেশের সংখ্যালঘুদের দেশ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা। তারা যদি মনে করে তারা নিরাপদে আছে, দেশের অন্য দশজন মানুষের মতো তারাও তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারছে, তাহলে বুঝতে হবে দেশটা ভালো চলছে। যদি দেখা যায়, তাদের ভেতর একধরনের হতাশা, অনিশ্চয়তা আর আতঙ্ক, তাহলে প্রতি মাসে একটা করে পদ্মা সেতু তৈরি করলেও বুঝতে হবে দেশটি ভালো নেই।
আমি নিজে কোনো জরিপ করিনি, কিন্তু তার পরও আমি জানি এই দেশের সংখ্যালঘুরা ভালো নেই। জাতিসংঘে চাকরি করে লাখ লাখ টাকা কামাই করতে যেন কোনো অসুবিধে না হয়, সেটা নিশ্চিত করার জন্য সরকার যেদিন ঘোষণা দিল, এই দেশে আদিবাসী বলে কেউ নেই, সেদিন শুধু আদিবাসীরা নয়, সংখ্যালঘুরাও হতাশায় দীর্ঘশ্বাস ফেলেছে। যে রাজনৈতিক নেতারা আদিবাসীদের অধিকার নিয়ে কথা বলতে বলতে একসময় মুখে ফেনা তুলে ফেলেছেন, এখন তাঁরাই যখন চোখের পানি না ফেলে অম্লান বদনে বলেন, এই দেশে কোনো আদিবাসী নেই, তখন আমি হতবাক হয়ে তাঁদের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকি। (যাঁরা এখনো জানেন না তাঁদের মনে করিয়ে দিই, আদিবাসী মানে নয় যারা আদি থেকে বাস করছে, ইংরেজি ইনডিজেনিয়াস শব্দটির বাংলা প্রতিশব্দ হিসেবে আদিবাসী শব্দটা ব্যবহার করা হয়, যার অর্থ মূল ধারা থেকে আলাদাভাবে থেকে যারা তাদের আদি ঐতিহ্যকে ধরে বেঁচে থাকে।)
এই দেশে সংখ্যালঘুরা যে ভালো নেই, তার খুব বড় একটা প্রমাণ কয়েক দিন আগে পত্রিকায় বের হয়েছিল, সেখানে লেখা হয়েছিল, এই দেশে হিন্দুদের সংখ্যা খুব দ্রুত কমে যাচ্ছে। আমরা সবাই সেই প্রতিবেদনটি দেখেও না দেখার ভান করেছি, পত্রপত্রিকার কোথাও সেটা নিয়ে কারও আলোচনা বা মন্তব্য চোখে পড়েনি। মনে হয় সবাই ধরে নিয়েছে এ রকমই তো হওয়ার কথা! এই দেশে আহমদিয়াদের ওপর নিয়মিত হামলা হয়, ২০০১ সালের নির্বাচনে চারদলীয় জোট বিজয়ী হলে হিন্দুদের ওপর একটা পৈশাচিক নিপীড়ন চালিয়েছিল, এবার প্রথমবারের মতো বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের ওপর হামলা হলো, তাহলে কি তাদেরও এই দেশ থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার কূটকৌশল শুরু হয়েছে? মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর যে নিপীড়ন চলছে, এই দেশে বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের ওপর অত্যাচার করে তার একটা বদলা নেব, সেটাই কি উদ্দেশ্য? (একটা জিনিস কি কেউ লক্ষ করেছে, মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মহান নেতা সারা পৃথিবীতে সম্মানিত, নোবেল বিজয়ী অং সান সু চি কিন্তু তাঁদের দেশে রোহিঙ্গাদের ওপর যে অত্যাচার হচ্ছে, সেই বিষয়ে কখনো মুখ খোলেন না?)
৩.
আমি আমার সারা জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে যে কয়টি সত্য আবিষ্কার করেছি তার একটি মাত্র দুটি শব্দ ব্যবহার করে লিখে ফেলা যায়, সেটি হচ্ছে, ‘বৈচিত্র্যেই সৌন্দর্য’। আমি এটা প্রথম স্পষ্টভাবে টের পেয়েছিলাম যুক্তরাষ্ট্রে। আমি বেল কমিউনিকেশনস রিসার্চের যে গ্রুপে কাজ করতাম, সেখানে প্রায় সব দেশেরই এক-দুজন করে লোক ছিল। পৃথিবীর নানা প্রান্তের নানা দেশের মানুষ সবাই যুক্তরাষ্ট্রকে নিজের দেশ হিসেবে গ্রহণ করে মহানন্দে পাশাপাশি বাস করছে। (শুধু আমার মনে হয় কোনো সমস্যা আছে, তা না হলে দেশের আকাশ কালো করে আসা মেঘ, ঝমঝম বৃষ্টি আর ব্যাঙের ডাক শোনার জন্য কেন এত মন কেমন কেমন করত কে জানে!) যুক্তরাষ্ট্রের অনেক বড় বড় সমস্যা আছে (যেমন সেই দেশের কালো পুরুষ মানুষের বেশির ভাগ জেলে থাকে) তার পরও বলতে হবে এই দেশের সবচেয়ে বড় শক্তি হচ্ছে পাশাপাশি ভিন্ন ভিন্ন (ডাইভারসিটি) ধরনের মানুষের বেঁচে থাকা। তারা নিজের দেশের ঐতিহ্য বা কালচারকে ছুড়ে ফেলেনি, সেগুলোকে ধরে রেখেই সবাই মিলে পাশাপাশি বাস করেছে। যারা আমার কথা বিশ্বাস করতে চায় না তাদের বলব সেখানকার চায়না টাউন ঘুরে আসতে। আমার খুব মজা লাগে যখন দেখি সেখানে আজকাল বাংলা টাউনও তৈরি হতে শুরু করেছে। আমার বুকটা ভেঙে যায় যখন দেখি এই দেশে আমরা আমাদের শিশুদের পুরোপুরি উল্টো জিনিস শিখিয়ে বড় করি, তাদের আমরা শেখাই, ‘আমার থেকে ভিন্ন মানে আমার থেকে খারাপ।’ অথচ সত্যি কথাটি হচ্ছে, আমার থেকে ভিন্ন কাউকে পাওয়ার অর্থ হচ্ছে পৃথিবীটাকে আরেকটু সুন্দর করে দেখার একটা সুযোগ।
আমার সব সময় মনে হয়, আমাদের দেশে মানুষের মধ্যে বৈচিত্র্য (ডাইভারসিটি) বলতে গেলে নেই। আমাদের খুব দুর্ভাগ্য, আমাদের দেশে ভিন্ন ভিন্ন ধর্ম, ভিন্ন ভিন্ন কালচার, ভিন্ন ভিন্ন গায়ের রং, ভিন্ন ভিন্ন চেহারা, ভিন্ন ভিন্ন ভাষার মানুষ খুব কম। তাই যে কয়জন আছে তাদের আমাদের বুক আগলে রাখার কথা, আমাদের লক্ষ রাখার কথা তারা যেন তাদের ভাষার চর্চা করতে পারে, তাদের সংস্কৃতিটাকে ধরে রাখতে পারে, তাদের ধর্ম নির্ভয়ে পালন করতে পারে। আগের প্রজন্মের অনেকেই বড় ধরনের ভুল ধারণা নিয়ে বড় হয়েছে। আমাদের বাচ্চাদের পাঠ্যবইয়ে কিছুদিন আগেও আদিবাসী বা সংখ্যালঘু এমনকি মেয়েদের নিয়ে কী অসম্মানজনক কথা লিখে রাখা হতো, সেটা কি কেউ লক্ষ করেছে? আস্তে আস্তে সেগুলো পাল্টানো হচ্ছে। আমার খুব বিশ্বাস করার ইচ্ছে যে আমাদের নতুন প্রজন্ম বড় হবে অনেক উদার মনের, আমরা পৃথিবীর যে সৌন্দর্য দেখতে পারিনি। ভিন্ন ভিন্ন মানুষের মধ্যে তারা সেই সৌন্দর্য দেখতে পাবে। রামু, উখিয়া ও পটিয়ায় যে ভয়ংকর ঘটনা ঘটেছে, সেটা যেন এই দেশের মানুষের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, আমাদের আরও অনেক সতর্ক হতে হবে। নতুন প্রজন্মকে একেবারে শৈশব থেকে ভিন্ন ধর্ম, ভিন্ন সংস্কৃতি, ভিন্ন ঐতিহ্যকে সম্মান করা শেখাতে হবে।
এই দেশে যাঁরা বৌদ্ধধর্মাবলম্বী তাঁরা নিশ্চয়ই তাঁদের মনের ভেতর একটি গভীর বেদনা নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন। আমি তাঁদের বলতে চাই, তাঁরা যেন হতাশাগ্রস্ত না হন, রামুর সেই ভয়ংকর রাতেও কিছু মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উন্মত্ত ধর্মান্ধদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল। এই দেশে এ রকম অসংখ্য মানুষ আছে, তারাই হচ্ছে এই দেশের শক্তি। এই দেশের মানুষ সাম্প্রদায়িক নয়, আমি নিশ্চিত ছাই হয়ে যাওয়া ফিনিক্স পাখি যে রকম আবার নতুন জন্ম নিয়ে পাখা মেলে দাঁড়ায়, এই দেশের অসাম্প্রদায়িক চেতনাও সেভাবে পাখা মেলে দাঁড়াবে।
মুক্তিযুদ্ধে হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান যেভাবে পাশাপাশি যুদ্ধ করে বুকের রক্ত দিয়ে দেশটাকে স্বাধীন করেছে, ঠিক সেভাবে আবার সবাই মিলে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে এই দেশ থেকে চিরদিনের জন্য সাম্প্রদায়িকতার বিষ দাঁত টেনে উপড়ে তুলে ফেলতে হবে। তা না হলে বাংলাদেশ নামের দেশটিই তো অর্থহীন হয়ে যাবে।
মুহম্মদ জাফর ইকবাল: লেখক। অধ্যাপক, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
No comments:
Post a Comment