উখিয়ায় আবার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ
রামুতে হামলাকারীদের উসকানি দেয় পুলিশ
কামরুল হাসান ও আব্দুল কুদ্দুস, কক্সবাজার থেকে | তারিখ: ০৭-১০-২০১২
বৌদ্ধপল্লি ও মন্দিরে হামলার ঘটনায় রামু থানার পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার তথ্য-প্রমাণ পেয়েছে পুলিশের তদন্ত কমিটি। হামলার সময় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিষ্ক্রিয় ছিলেন। আর দুই কনস্টেবল হামলাকারীদের উসকানি দেন। পুলিশেরই এক সদস্য তদন্ত কমিটির কাছে এই অভিযোগ করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করেন। পুলিশ সুপার সেলিম মো. জাহাঙ্গীর প্রথম আলোকে বলেন, দায়িত্বে অবহেলার জন্য ওসি এ কে নজিবুল ইসলামকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে।
কক্সবাজারের রামুসহ বিভিন্ন স্থানে বৌদ্ধমন্দিরে হামলার ঘটনায় পুলিশের গাফিলতি ছিল কি না, তা তদন্তের জন্য উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি করা হয়েছে। চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি নওশের আলী এর প্রধান।
তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, থানার উপপরিদর্শক (এসআই) উজ্জ্বল কান্তি দাস কমিটিকে বলেন, ঘটনার রাতে (২৯ সেপ্টেম্বর) ওসি তাঁকে ফোন করে দ্রুত আসতে বললে তিনি আসেন। তিনি এসে দেখেন, রামু বাজারের মোড়ে ফারুকের দোকানে অনেকে জড়ো হয়ে ফেসবুকের ছবি দেখছেন। তিনি দোকানে ঢুকে দেখতে পান, উত্তর কুমার বড়ুয়া নামের এক তরুণের ফেসবুক থেকে পবিত্র কোরআন শরিফ অবমাননার একটি ছবি তাঁর ২৬ জন বন্ধুর কাছে পাঠানো হয়েছে। তিনি কম্পিউটারটি জব্দ করে থানায় আনেন। এরপর উত্তমকে গ্রেপ্তার করতে তাঁর বাসায় যান। সেখানে গিয়ে দেখেন, উত্তমের মা ও তাঁর বোন ছাড়া বাসায় কেউ নেই। তিনি তাঁদের আটক করে থানায় আনেন। রামু মোড়ে এসে দেখতে পান, সেখানে সমাবেশ হচ্ছে। এতে রামু নাগরিক উন্নয়ন কমিটির সভাপতি ও ছাত্রলীগের সাবেক নেতা নূরুল ইসলাম ওরফে সেলিম ও মৎস্যজীবী লীগের নেতা আনসারুল হকসহ কয়েকজন বক্তব্য দেন। ওসিও বক্তব্য দেন। এক ঘণ্টা পর সমাবেশটি শেষ হয়। এলাকায় তখন উত্তেজনা বিরাজ করছিল। কিন্তু ওসি একেবারে নিষ্ক্রিয় ছিলেন। কিছুক্ষণ পর ওসি শ্রীকুলের লালচিং মন্দিরে পাহারার জন্য যেতে বললে তিনি তিন সহকর্মী নিয়ে সেখানে যান। ওই মন্দিরে হামলার চেষ্টা করা হলে তিনি ওসির কাছে অতিরিক্ত লোক চান। বারবার ফোন করলেও ওসি সাড়া দেননি। একপর্যায়ে তিনি ওসির ফোন বন্ধ পান। ফলে তিনজনকে নিয়ে মন্দিরের সামনে তিনি অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে ছিলেন। তাঁদের সামনেই মন্দিরটি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।
ছাত্রলীগের এক নেতা কমিটিকে বলেন, রামু থানার কনস্টেবল তাজুল ইসলাম ও আবদুর রউফ সরাসরি হামলাকারীদের সহায়তা করেছেন। তাঁরা লোকজনকে নানাভাবে উসকানিও দিয়েছেন।
সুপ্রিয় বড়ুয়া নামের এক যুবক প্রথম আলোকে বলেন, রাত ১০টার দিকে একটি মিছিল কেন্দ্রীয় সীমা বৌদ্ধবিহার প্রদক্ষিণ করে। মিছিলটি চলে যাওয়ার পর বৌদ্ধ যুবকেরা মন্দির রক্ষায় এগিয়ে আসেন। তখন ওসি যুবকদের বলেন, ‘তোমরা চলে যাও, কোনো সমস্যা নেই।’
এসব অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে ওই সময়ের ওসি নজিবুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, প্রথম দফা পরিস্থিতি শান্ত হয়ে গেলেও হঠাৎ করে রাত ১১টার পর বিভিন্ন দিক থেকে শত শত লোক রামুতে আসতে থাকে। এ পরিস্থিতিতে তাঁদের করার কিছু ছিল না।
উখিয়া প্রতিনিধি জানান, কক্সবাজারের উখিয়ার হলদিয়াপালং ইউনিয়নের উত্তর বড়বিল গ্রামের বড়ুয়া সম্প্রদায়ের এক বিধবা নারীর বাড়িতে দুর্বৃত্তরা অগ্নিসংযোগ করেছে। এলাকাবাসী এগিয়ে এলে বাড়িটি পুরোপুরি ভস্মীভূত হওয়া থেকে রক্ষা পায়। শুক্রবার রাত দুইটায় এ ঘটনা ঘটে।
এলাকাবাসী ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার সূত্রে জানা যায়, গ্রামের বজেন্দ্র বড়ুয়ার বিধবা স্ত্রী বিন্দুবালা বড়ুয়ার কাঁচাঘরের এক পাশে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। বিন্দু ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা তখন ঘুমিয়ে ছিলেন। উত্তর বড়বিল সর্বজনীন বৌদ্ধবিহার পরিচালনা কমিটির সভাপতি নাংশু বড়ুয়া জানান, মন্দিরে পাহারারত লোকজন দৌড়ে গিয়ে আগুন নেভান। এ নিয়ে এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে।
এর আগে ৩০ সেপ্টেম্বর রাতে উখিয়ার পালংখালী ও পশ্চিম মরিচ্যা গ্রামে দুর্বৃত্তরা হামলা চালিয়ে দুটি বৌদ্ধমন্দির ভাঙচুর করে ও পেট্রল দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়।
নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম ও পটিয়া প্রতিনিধি জানান, পটিয়ায় বিহার ও মন্দিরে হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া দুজন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এ ঘটনায় জড়িত ৩৪ জনের নামও বলেছেন তাঁরা। এর মধ্যে হামলার উসকানিদাতা তিনজনের নাম রয়েছে। শুক্রবার রাতে চট্টগ্রামের বিচারিক হাকিম ফারজানা আকতারের আদালতে জবানবন্দি দেন তাঁরা।
আদালত সূত্র জানায়, পটিয়ার ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া আসামি মো. মহিউদ্দিন ১৮ জনকে জড়িয়ে এবং মো. ইব্রাহিম ২১ জনকে জড়িয়ে এই জবানবন্দি দেন। এর মধ্যে পাঁচজনের নাম দুজনের জবানবন্দিতে রয়েছে। তাঁদের অধিকাংশই জাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডে ঠিকাদারের নিযুক্ত অস্থায়ী শ্রমিক।
আদালত সূত্রমতে, জবানবন্দিতে তাঁরা বলেন, ৩০ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টায় শিপইয়ার্ডের ক্যানটিনে চা খাওয়ার সময় চার-পাঁচজন শ্রমিক মুঠোফোনের মাধ্যমে ফেসবুকে পবিত্র কোরআন শরিফ অবমাননার ছবি দেখান। এ সময় সেখানে উপস্থিত অনেকেই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। একপর্যায়ে তাঁরা দুজনসহ অনেকে বিহার ও মন্দিরে হামলার জন্য বের হওয়ার চেষ্টা করলে দারোয়ান বাধা দেন। তখন উত্তেজিত শ্রমিকেরা তালা ভেঙে বেড়িয়ে পড়েন। তাঁরা প্রথমে লাখেরা অভয় বিহারে হামলা করেন। এরপর সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মন্দিরে হামলা করেন। তবে এই দুই জায়গায় হামলার পর অন্যরা আরও হামলার জন্য বিহার ও মন্দিরের দিকে ছুটে গেলেও তাঁরা দুজন ফিরে আসেন বলে জবানবন্দিতে বলেন।
পুলিশ জানায়, পটিয়ায় হামলার ঘটনায় এ পর্যন্ত ৩২ জন গ্রেপ্তার হয়েছে। গতকাল সাতজনের দুই দিনের রিমান্ড শেষ হয়েছে। নতুন করে গতকাল আরও সাতজনকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান বলেন, ‘হামলার ঘটনায় এ পর্যন্ত ৯০ জনকে শনাক্ত করেছি। তবে মূল হামলার নেতৃত্বে ছিল পাঁচ থেকে ছয়জন। তাঁদের গ্রেপ্তার করতে পারলে ইন্ধনদাতাদের নাম বেরিয়ে আসবে।’
টেকনাফ প্রতিনিধি জানান, টেকনাফে বৌদ্ধ ও হিন্দুপল্লিতে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদের মধ্যে ২৩ জনকে রিমান্ড শেষে গতকাল সকালে কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ বিচারক হাকিমের আদালতে পাঠানো হয়েছে। দুটি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও হোয়াইক্যং পুলিশ ফাঁড়ির এসআই বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে আসামিদের জড়িত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। ৩০ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের জুয়াড়িখোলা গ্রামে বৌদ্ধ ও হিন্দুপল্লিতে হামলার ঘটনায় এ পর্যন্ত ৩১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করেন। পুলিশ সুপার সেলিম মো. জাহাঙ্গীর প্রথম আলোকে বলেন, দায়িত্বে অবহেলার জন্য ওসি এ কে নজিবুল ইসলামকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে।
কক্সবাজারের রামুসহ বিভিন্ন স্থানে বৌদ্ধমন্দিরে হামলার ঘটনায় পুলিশের গাফিলতি ছিল কি না, তা তদন্তের জন্য উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি করা হয়েছে। চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি নওশের আলী এর প্রধান।
তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, থানার উপপরিদর্শক (এসআই) উজ্জ্বল কান্তি দাস কমিটিকে বলেন, ঘটনার রাতে (২৯ সেপ্টেম্বর) ওসি তাঁকে ফোন করে দ্রুত আসতে বললে তিনি আসেন। তিনি এসে দেখেন, রামু বাজারের মোড়ে ফারুকের দোকানে অনেকে জড়ো হয়ে ফেসবুকের ছবি দেখছেন। তিনি দোকানে ঢুকে দেখতে পান, উত্তর কুমার বড়ুয়া নামের এক তরুণের ফেসবুক থেকে পবিত্র কোরআন শরিফ অবমাননার একটি ছবি তাঁর ২৬ জন বন্ধুর কাছে পাঠানো হয়েছে। তিনি কম্পিউটারটি জব্দ করে থানায় আনেন। এরপর উত্তমকে গ্রেপ্তার করতে তাঁর বাসায় যান। সেখানে গিয়ে দেখেন, উত্তমের মা ও তাঁর বোন ছাড়া বাসায় কেউ নেই। তিনি তাঁদের আটক করে থানায় আনেন। রামু মোড়ে এসে দেখতে পান, সেখানে সমাবেশ হচ্ছে। এতে রামু নাগরিক উন্নয়ন কমিটির সভাপতি ও ছাত্রলীগের সাবেক নেতা নূরুল ইসলাম ওরফে সেলিম ও মৎস্যজীবী লীগের নেতা আনসারুল হকসহ কয়েকজন বক্তব্য দেন। ওসিও বক্তব্য দেন। এক ঘণ্টা পর সমাবেশটি শেষ হয়। এলাকায় তখন উত্তেজনা বিরাজ করছিল। কিন্তু ওসি একেবারে নিষ্ক্রিয় ছিলেন। কিছুক্ষণ পর ওসি শ্রীকুলের লালচিং মন্দিরে পাহারার জন্য যেতে বললে তিনি তিন সহকর্মী নিয়ে সেখানে যান। ওই মন্দিরে হামলার চেষ্টা করা হলে তিনি ওসির কাছে অতিরিক্ত লোক চান। বারবার ফোন করলেও ওসি সাড়া দেননি। একপর্যায়ে তিনি ওসির ফোন বন্ধ পান। ফলে তিনজনকে নিয়ে মন্দিরের সামনে তিনি অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে ছিলেন। তাঁদের সামনেই মন্দিরটি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।
ছাত্রলীগের এক নেতা কমিটিকে বলেন, রামু থানার কনস্টেবল তাজুল ইসলাম ও আবদুর রউফ সরাসরি হামলাকারীদের সহায়তা করেছেন। তাঁরা লোকজনকে নানাভাবে উসকানিও দিয়েছেন।
সুপ্রিয় বড়ুয়া নামের এক যুবক প্রথম আলোকে বলেন, রাত ১০টার দিকে একটি মিছিল কেন্দ্রীয় সীমা বৌদ্ধবিহার প্রদক্ষিণ করে। মিছিলটি চলে যাওয়ার পর বৌদ্ধ যুবকেরা মন্দির রক্ষায় এগিয়ে আসেন। তখন ওসি যুবকদের বলেন, ‘তোমরা চলে যাও, কোনো সমস্যা নেই।’
এসব অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে ওই সময়ের ওসি নজিবুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, প্রথম দফা পরিস্থিতি শান্ত হয়ে গেলেও হঠাৎ করে রাত ১১টার পর বিভিন্ন দিক থেকে শত শত লোক রামুতে আসতে থাকে। এ পরিস্থিতিতে তাঁদের করার কিছু ছিল না।
উখিয়া প্রতিনিধি জানান, কক্সবাজারের উখিয়ার হলদিয়াপালং ইউনিয়নের উত্তর বড়বিল গ্রামের বড়ুয়া সম্প্রদায়ের এক বিধবা নারীর বাড়িতে দুর্বৃত্তরা অগ্নিসংযোগ করেছে। এলাকাবাসী এগিয়ে এলে বাড়িটি পুরোপুরি ভস্মীভূত হওয়া থেকে রক্ষা পায়। শুক্রবার রাত দুইটায় এ ঘটনা ঘটে।
এলাকাবাসী ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার সূত্রে জানা যায়, গ্রামের বজেন্দ্র বড়ুয়ার বিধবা স্ত্রী বিন্দুবালা বড়ুয়ার কাঁচাঘরের এক পাশে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। বিন্দু ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা তখন ঘুমিয়ে ছিলেন। উত্তর বড়বিল সর্বজনীন বৌদ্ধবিহার পরিচালনা কমিটির সভাপতি নাংশু বড়ুয়া জানান, মন্দিরে পাহারারত লোকজন দৌড়ে গিয়ে আগুন নেভান। এ নিয়ে এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে।
এর আগে ৩০ সেপ্টেম্বর রাতে উখিয়ার পালংখালী ও পশ্চিম মরিচ্যা গ্রামে দুর্বৃত্তরা হামলা চালিয়ে দুটি বৌদ্ধমন্দির ভাঙচুর করে ও পেট্রল দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়।
নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম ও পটিয়া প্রতিনিধি জানান, পটিয়ায় বিহার ও মন্দিরে হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া দুজন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এ ঘটনায় জড়িত ৩৪ জনের নামও বলেছেন তাঁরা। এর মধ্যে হামলার উসকানিদাতা তিনজনের নাম রয়েছে। শুক্রবার রাতে চট্টগ্রামের বিচারিক হাকিম ফারজানা আকতারের আদালতে জবানবন্দি দেন তাঁরা।
আদালত সূত্র জানায়, পটিয়ার ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া আসামি মো. মহিউদ্দিন ১৮ জনকে জড়িয়ে এবং মো. ইব্রাহিম ২১ জনকে জড়িয়ে এই জবানবন্দি দেন। এর মধ্যে পাঁচজনের নাম দুজনের জবানবন্দিতে রয়েছে। তাঁদের অধিকাংশই জাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডে ঠিকাদারের নিযুক্ত অস্থায়ী শ্রমিক।
আদালত সূত্রমতে, জবানবন্দিতে তাঁরা বলেন, ৩০ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টায় শিপইয়ার্ডের ক্যানটিনে চা খাওয়ার সময় চার-পাঁচজন শ্রমিক মুঠোফোনের মাধ্যমে ফেসবুকে পবিত্র কোরআন শরিফ অবমাননার ছবি দেখান। এ সময় সেখানে উপস্থিত অনেকেই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। একপর্যায়ে তাঁরা দুজনসহ অনেকে বিহার ও মন্দিরে হামলার জন্য বের হওয়ার চেষ্টা করলে দারোয়ান বাধা দেন। তখন উত্তেজিত শ্রমিকেরা তালা ভেঙে বেড়িয়ে পড়েন। তাঁরা প্রথমে লাখেরা অভয় বিহারে হামলা করেন। এরপর সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মন্দিরে হামলা করেন। তবে এই দুই জায়গায় হামলার পর অন্যরা আরও হামলার জন্য বিহার ও মন্দিরের দিকে ছুটে গেলেও তাঁরা দুজন ফিরে আসেন বলে জবানবন্দিতে বলেন।
পুলিশ জানায়, পটিয়ায় হামলার ঘটনায় এ পর্যন্ত ৩২ জন গ্রেপ্তার হয়েছে। গতকাল সাতজনের দুই দিনের রিমান্ড শেষ হয়েছে। নতুন করে গতকাল আরও সাতজনকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান বলেন, ‘হামলার ঘটনায় এ পর্যন্ত ৯০ জনকে শনাক্ত করেছি। তবে মূল হামলার নেতৃত্বে ছিল পাঁচ থেকে ছয়জন। তাঁদের গ্রেপ্তার করতে পারলে ইন্ধনদাতাদের নাম বেরিয়ে আসবে।’
টেকনাফ প্রতিনিধি জানান, টেকনাফে বৌদ্ধ ও হিন্দুপল্লিতে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদের মধ্যে ২৩ জনকে রিমান্ড শেষে গতকাল সকালে কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ বিচারক হাকিমের আদালতে পাঠানো হয়েছে। দুটি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও হোয়াইক্যং পুলিশ ফাঁড়ির এসআই বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে আসামিদের জড়িত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। ৩০ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের জুয়াড়িখোলা গ্রামে বৌদ্ধ ও হিন্দুপল্লিতে হামলার ঘটনায় এ পর্যন্ত ৩১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
No comments:
Post a Comment